প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন জেলার প্রধান দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বাড়ানো হচ্ছে সৌন্দর্য ও নানা আকর্ষণ। এচন্য বাড়ছে দর্শনার্থী সংখ্যা। এ থেকে বাড়ছে রাজস্ব আয়ও। জেলা প্রশাসক বলছেন, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গণভবন থেকে আয় বেড়েছে ৯৪ হাজার টাকা।
নাটোরের এনডিসি অনিন্দ্য কুমার মণ্ডল জানান, গত ৯ মার্চ দর্শনার্থীদের জন্য গণভবন উন্মুক্ত করার পর থেকে বাড়ানো হচ্ছে এর সৌন্দর্য। এরই মধ্যে গণভবনে তৈরি করা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, সংগ্রহশালা এবং লাগানো হয়েছে বিরল প্রজাতির গাছ। সংগ্রহশালায় সংযুক্ত করা হয়েছে রাজা-রানিসহ রাজকুমারী ইন্দু প্রভার বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী। চিড়িয়াখানায় বাড়ানো হয়েছে হরিণের সংখ্যা। তাই দিন দিন বাড়ছে দর্শনার্থী। এ থেকে বাড়ছে রাজস্ব আয়ও। গত ঈদুল আজহায় গণভবনে আয় হয়েছে ৩ লাখ টাকা।
বর্তমানে উত্তরা গণভবনকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রধান ফটক পার হলেই দু’পাশে চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন লেক। ফটকের ডানদিকে শত বছরের পুরনো আম বাগান। বাগানে পাখির জন্য অভয়াশ্রম করে দেওয়া হয়েছে। লেক পার হলেই প্রধান প্যালেস শুরু। ডানে প্রধান প্যালেস রেখে ,বামদিকে গ্র্যান্ড মাদার’স প্যালেস, রানী মহল আর রানীঘাট। এই রানীঘাটে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির, দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ। এর মাঝে মাঝে তৈরি করা হয়েছে পায়ে হাঁটার রাস্তা। এখানেই রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের হাতে লাগানো হৈমন্তী গাছ। পাশেই মিনি চিড়িয়াখানা।
প্রধান প্যালেসের পাশেই রয়েছে ইতালিয়ান গার্ডেন। রাজার আমলের এই গার্ডেনে এখনও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে ইটালিয়ান শ্বেত পাথরের মূর্তি। গার্ডেনের মাঝে রয়েছে রাজার আমলের দাবা খেলার ঘর, ফোয়ারা, বসার বেঞ্চ, মাছ শিকার করা অবস্থায় লোহার মূর্তি আর ওয়াচ ঘর। ডারডেন এর মাঝে ঝুমকো লতা, হংসলতাসহ রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছ।
প্রধান প্যালেসের সামনে রয়েছে রাজার আবক্ষ মূর্তি। ভেতরে রয়েছে রাজার আমলের রান্নাঘর, শোয়ার ঘর, সুবিশাল হল রুম এবং শান বাঁধানো ঘাট। রয়েছে রাজার আমলের পাওয়ার সাপ্লাই মেশিন।
প্রধান প্যালেসের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে সংগ্রহশালা। ৩০ টাকার টিকেট কেটে সংগ্রহশালায় প্রবেশ করতে হয়। গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় চোখে পড়বে রাজা রানির যুগলবন্দি ছবি, ব্রোঞ্জ মূর্তি, রাজ পরিবারে ব্যবহৃত আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, রাজ সিংহাসন, রাজ টেবিল, গার্ডেন ফ্যান, রাজ পালঙ্ক, রাজ পরিবারে ব্যবহৃত ড্রেসিং টেবিল, মাটির তৈরি চাল রাখার পাত্র এবং রাজপরিবারের সিন্দুক।
পাশেই ফটো গ্যালারি। ফটো গ্যালারি দৃষ্টিনন্দন ছবি হল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ১৯৭৪ সালে গণভবন পরিদর্শনে এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বিরল ছবিটি স্থান করে নিয়েছে ফটো গ্যালারিতে। পাশেই রয়েছে রাজকুমারী ইন্দু প্রভার ছবি, ডায়েরি, স্বামীকে লেখা চিঠি, স্বামীর পাঠানো চিঠি, বঙ্গোপসাগর শিরোনামে কবিতা, রাজকুমারীর কলম, দোয়াত। পাশের রুমেই দেখা মিলবে রাজার ব্যবহৃত মুকুট, গাউন আর পোশাক।
নতুন সাজে অপরূপ এই গণভবন দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পদচারণায় মুখর থাকছে উত্তরা গণভবন। দর্শনার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে ভবন পরিদর্শনের জন্য গাছে গাছে স্থাপন করা হয়েছে সাউন্ড বক্স। বক্সে বেজে চলেছে বিভিন্ন গান।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, গণভবনকে জেলার প্রধান দর্শনীয় স্থান করতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে উন্নয়ন প্রস্তাবনা। প্রস্তাবনাটি পাস হলে গণভবনে বাড়বে আরো সৌন্দর্য। বাড়বে দর্শনার্থী। বাড়বে রাজস্ব আয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণভবনকে অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের জায়গা করতে চায় জেলা প্রশাসন।
এটি বাস্তবায়ন হলে উত্তরা গণভবনের নামে আর আকর্ষণে ছুটে আসবে দর্শনার্থী। বাড়বে রাজস্ব। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে স্থানীয় মানুষের, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।