‘আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলাম আমরা। বিমানজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সবাই আল্লাহর নাম নিচ্ছিলেন, দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। সাধারণত আমাদের মতো মানুষরা এর আগে এমন দুর্ঘটনায় পড়ি নাই। খুবই আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম আমরা। বিমান যারা কন্ট্রোল করছিলেন তারাও ক্লিয়ার করছিলেন না আসলে কী ঘটছে।’
কথাগুলো বলছিলেন নোজ হুইল সমস্যায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা ইউএস-বাংলা ৭৩৭ ফ্লাইটের যাত্রী ডা. পুলক। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় এই যাত্রীর।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. পুলক বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে পাইলট ল্যান্ড করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি ল্যান্ড করতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি জানালেন, আমরা জরুরি অবতরণ করবো। জরুরি অবতরণ করলে কী করতে হবে আমাদের বিভিন্ন প্রসেস বলে দিচ্ছিলেন। আমরা উনার নির্দেশনা অনুযায়ী সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এরপরও তিনি দুইবার কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে একপর্যায়ে তিনি (পাইলট) বলেন, আমরা কক্সবাজার যেতে পারছি না। আমরা চট্টগ্রামে অবতরণ করবো। তারপর আমরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছিল ১২টা ২৭ মিনিটে কক্সবাজার নামাবে। ১২টা ২৭ মিনিট পেরিয়ে যখন ১টা বাজার কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছিল তখন আমরা জানতে চাইলাম ঘটনাটা কী? আমাদের নামানো হচ্ছে না কেন? কী সমস্যা হয়েছে? তখন তারা আমাদের বলেন, কোনও সমস্যা হয়নি। আপনারা টেনশন করবেন না, বসুন। তার অনেকক্ষণ পর তারা আমাদের জানান, আমরা ইমার্জেন্সি ল্যান্ড করবো। পরে অবশ্য খুব দক্ষতার সঙ্গে পাইলট বিমানটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ল্যান্ড করেন।’
ভারতের বোম্বে থেকে আসা একজন ডাক্তার ওই ফ্লাইটে ছিলেন। ডা. শাহা নামে ওই যাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি পাইলটকে অভিনন্দন জানাবো। তিনি খুব দক্ষতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে বিমানটি অবতরণ করেছেন।’
নাছির উদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ঢাকা থেকে বিমানে উঠলাম তখন পাইলট আমাদের জানিয়েছিলেন ৪০ মিনিটের মধ্যে তিনি আমাদের কক্সবাজার ল্যান্ড করাবেন। ৪০ মিনিট পর যখন সি-বিচ দেখলাম তখন ভাবলাম আমরা কক্সবাজার পৌঁছে গেছি। হঠাৎ কী হলো জানি না। একবার নিচে ল্যান্ড করতে যায়, আবার ওপরের দিকে চলে যায়। আবার ল্যান্ড করতে যায়, আবার ওপরের দিকে চলে যায়। এভাবে কয়েকবার ঝাঁকুনি দেওয়ার পর সবাই বুঝতে পারেন অবস্থা খারাপ। তখন সবাই দোয়া দরুদ পড়তে থাকেন। বিমানবালারা আমাদের শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু বিমানের অবস্থা দেখে আমরা বুঝে গেছি অবস্থা খারাপ। তখন পাইলট আমাদের জরুরি বার্তা দিলেন, বিমানের নোজ হুইল খারাপ, জরুরি অবতরণ করবেন।’
এ ঘটনায় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে ইউএস-বাংলার বিমানটি দ্রুত অবতরণ করার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিমানবন্দরের সিনিয়র স্টেশন ট্রাফিক ম্যানেজার হাসান জহির। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘কক্সবাজারগামী ইউএস-বাংলার ৭৩৭ বোয়িংটি সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আকাশেই বিমানটির নোজ হুইলে সামান্য সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। নিরাপদেই অবতরণ করেছে। বিমানটিতে ১৫৩ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের সঙ্গে ১১জন শিশু ছিল। এছাড়া ৭ জন ক্রু ছিলেন। বিমানে থাকা যাত্রীরা সবাই ভালো আছেন। এ ঘটনায় সিভিল অ্যাভিয়েশন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ইউএস-বাংলার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ইউএস-বাংলার পক্ষ থেকে যাত্রীরা সবাই ভালো আছেন দাবি করলেও সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউএস বাংলার ওই ফ্লাইটে থাকা ৪০ জন যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কারও মাথা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে গেছে। এদের মধ্যে ২৭ জনকে সামান্য ড্রেসিং করে দিতে হয়েছে, ১২ জনকে ব্যান্ডেজ দিতে হয়েছে। আহতদের মধ্যে এক নারী যাত্রীর অবস্থা একটু গুরুতর ছিল। তাকে এয়ারফোর্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।’
সিভিল সার্জন আরও জানান, ‘দুর্ঘটনা কবলিত ওই বিমানের থাকা ১১০ জন যাত্রী ট্রমায় ভুগছেন। এসব যাত্রীর অনেকেই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন। শরীর চেকআপের পাশাপাশি তাদের ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন-
শাহ আমানতে বিমান ওঠানামা ফের শুরু