X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিন্ন ধারার ছাত্র রাজনীতি কুয়েটে

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫৫আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৫

ক্যাম্পাসের আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে

কোনও ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। আধিপত্য বিস্তার বা দখলদারিত্বের চেষ্টাও নেই। লেখাপড়া আর শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ই মূলকথা। এভাবেই চলছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি। এখানে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গঠিত ‘ছাত্র কল্যাণ পরিষদ’ই ক্যাম্পাসে মুখপাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই কুয়েট ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়। তার এক মাসের মধ্যেই ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১২ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে উপস্থাপন করে, যার অধিকাংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৬ সালে ছাত্রদলের সাত সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। ছাত্রফ্রন্টের কমিটি সমাজ উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৎপর। ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কমিটি ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে কর্মী না থাকায় নতুন কমিটি হয়নি। ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মসজিদভিত্তিক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে।

২০১৭ সালে কুয়েট ছাত্রলীগের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে আবুল হাসান শোভন সভাপতি ও সাদমান নাহিয়ান সেজান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পেয়েই তারা সংগঠনকে নতুনভাবে উপস্থাপনের উদ্যোগ হাতে নেন। পাশাপাশি সংগঠনকে শিক্ষার্থীবান্ধব করতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবিতে মাঠে নামেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে গত এক বছরে তাদের অধিকার, দাবি ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নজর দেয় সংগঠনটি। এসব দাবি আদায়ের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বেশ কিছু সচেতনতা ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়, যা প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমাদৃত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র কল্যাণ পরিষদ’ গঠন করে। এ পরিষদে আবুল হাসান শোভনকে আহ্বায়ক এবং সাদমান নাহিয়ান সেজানকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়।

ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিছন্নতায় শিক্ষার্থীরা

ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ভিন্নধর্মী কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সিভিল ও মেকানিক্যাল বিল্ডিং এক্সটেনশন, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মসজিদের এক্সটেনশন, পাঁচতলা একাডেমিক বিল্ডিংগুলোতে লিফট ব্যবস্থা, গেস্ট হাউসে লিফট, অডিটোরিয়ামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাসহ অডিটোরিয়ামের সামনে বঙ্গবন্ধুর মনুমেন্ট, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ‘মুক্তমঞ্চ’ তৈরির জন্যও প্রশাসনের কাছে দাবি উপস্থাপন করে এ কমিটি, যার সবগুলোই আদায় হয়েছে। অডিটোরিয়ামের সংস্কার কাজ চলছে। ফলে বর্তমানে প্রায় সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে চলমান শহীদ মিনারের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করে এ বছর সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হয়। ক্যাম্পাসের ভেতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এটিএম বুথ চালু এবং পকেট গেটে টিনের গেট ভেঙে নতুন গেট, ডা. এম এ রশিদ হল থেকে পকেট গেট পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। 

এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ক্যাফেটেরিয়ার উন্নয়ন ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যা গিং বন্ধে প্রশাসনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ ও নিজস্ব পদক্ষেপ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর জন্য কোনও কক্ষ বরাদ্দ ছিল না। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠনের জন্য রুমের ব্যবস্থা করেছে ছাত্র কল্যাণ পরিষদ।

গ্রিন ও ক্লিন ক্যাম্পাস খ্যাত কুয়েট ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে তৈরি  ‘দূর্বার বাংলা’র পরিবেশ সুন্দর এবং অক্ষুণ্ন রাখতে সব সংগঠনই সচেষ্ট। তাছাড়া সংগঠনের কোনও নেতাকর্মী যেন ক্যাম্পাসের কোথাও কোনও দোকানে বাকি না রাখেন সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রয়েছে।

ছিমছাম কুয়েট ক্যাম্পাস

কুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ম্যানেজমেন্ট (আইইএম) বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও কুয়েট ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি রায়হান আহমেদ জয় বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীরের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ অভ্যাস গড়ে ওঠে। ছাত্র কল্যাণ পরিষদ তারই একটি ধারাবাহিকতার ফসল। এখন শিক্ষার্থীরা চকলেটের খোসাও সড়কে ফেলতে চান না। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ডাস্টবিন ব্যবহার করে। আর হলগুলোতে আগের মতো সমস্যা নেই। এ কারণে হলের শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট।

কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি আবুল হাসান শোভন বলেন, আগের কমিটি ও আহ্বায়ক কমিটি এ ধরনের কাজ শুরু করে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় কুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিটি এ ক্যাম্পাসে সফলতার মুখ দেখে। প্রতিটি কর্মকাণ্ডই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে  পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি আছে। ছাত্রফ্রন্টেরও কার্যক্রম আছে। ছাত্র ইউনিয়নেরও কমিটি ছিল। ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া বলেন, ‘কুয়েট এখন পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস। ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, সব হলের প্রতিনিধিসহ সকলের অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসে উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম থাকলেও এখানে সেভাবে রাজনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পায় না। সার্বিকভাবে কুয়েট এখন শিক্ষার্থীদের তদারকিতেই পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস।’

 

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে