X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি-আ.লীগ, নীরব বিএনপি-জামায়াত

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২০আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৪৭

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রংপুরের ৬টি নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। সরেজমিন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের মাঠে দেখা গেলেও বিএনপি, জামায়াত এবং ২০ দলীয় জোটের কোনও কার্যক্রম নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয়টি নির্বাচনি আসনের এই জেলায় এবার সবার চোখ দুটি আসনের দিকে। এই দুই আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচন করার কথা মুখে মুখে ঘুরছে। রংপুর সদর ( রংপুর-৩ আসন) থেকে আবারও প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি নিজে এটা নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। অন্যদিকে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন করতে পারেন বলেও জানা গেছে। এটি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এ তথ্য জানালেও কেউ প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। আবার দলীয় সূত্রেই জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী এ আসনে নির্বাচন না করলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এখানে প্রার্থী হবেন। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন হলে হিসাব বদলে যেতে পারে বলেও মনে করছেন নেতারা।

রংপুরের ৬ আসনে আ.লীগ (প্রথম ৭ জন), জাপা (পরের ৫ জন) ও বিএনপির (শেষের ৩ জন) আলোচিত প্রার্থীরা

এছাড়াও রংপুরের বাকি ৪টি আসনে নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। উভয় দলেরই একাধিক নেতা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন।

অন্যদিকে নির্বাচনি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের ২০ দলীয় জোটের ২-৪ জন নেতার প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা গেলেও এদের কারও কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া অতীতেও এই জেলায় বিএনপি বা জামায়াতের কোনও প্রার্থীকে জিততে দেখা যায়নি। ১৯৯০ সালের পর থেকে যে ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে রংপুরের ৬টি আসনের কোনও আসনেই বিএনপি বা জামায়াত প্রার্থীদের জয়ী হতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, তাদের বেশিরভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এসব কারণে রংপুরের ৬টি আসনে বিএনপির নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে জামায়াত অন্তত দুটি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

রংপুর-১:

গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর-১ আসনটি গঠিত। এই আসনে বিগত ৫টি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের তেমন কোনও শক্তিশালী প্রার্থী নেই বললেই চলে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ জাপা জেলা সভাপতি; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি অনেক দিন ধরে তার নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও  সামাজিক কর্মকাণ্ড, উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা উদ্বোধন করতে আসেন। এ ব্যাপারে মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, গঙ্গাচড়া উপজেলাকে মডেল উপজেলায় পরিণত করার সব উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেছেন। এ এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা তিস্তা নদীর ভাঙন। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাঁধ নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে বলেও জানন তিনি।

এই আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবলু মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন। তবে এ আসনে বিএনপির কোনও প্রার্থী নেই বললেই চলে। অন্যদিকে জামায়াতের অধ্যাপক আব্দুল গনি আবারও প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্রভাবে তিনি নির্বাচন করবেন বলেও জানা গেছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, এ আসনে তাদের দলের পক্ষে কেউ প্রার্থী হবে না। তবে তারা জামায়াত প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন। 

এইচ এম এরশাদ, মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ জাতীয় পার্টির আলোচিত প্রার্থীরা

রংপুর-২:

তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রংপুর-২ আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী ওরফে ডিউক চোধুরী। বয়সে তরুণ হলেও ইতোমধ্যে নিজের নির্বাচনি এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বিশেষ কাজ ছাড়া বেশিরভাগ সময় নিজের বাড়ি বদরগঞ্জেই থাকেন। গত ৫ বছরে এই দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ডিউক চৌধুরী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনেওয়াজ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটুও নির্বাচন করতে চান এই আসন থেকে। তারা মাঝে মাঝে এলাকায় আসেন। তবে ডিউক চৌধুরী ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রাখায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তাকেই এগিয়ে রাখছেন দলের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির তেমন কোনও কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। সাবেক সংসদ সদস্য ও জাপা নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার বিএনপিতে যোগ দিলেও নির্বাচন করার কোনও প্রস্তুতি যেমন তার নেই, তেমনি তাদের দলেরও নেই। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সাবেক এই জাপা নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার বা উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তী প্রার্থী হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে জাপার পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন সাবলু চৌধুরী। বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো থাকায় মনোনয়ন তিনি পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি ছাড়াও জাপা নেতা মোকাম্মেল চৌধুরীও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন। জামায়াতের একমাত্র প্রার্থী দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাই তার নির্বাচন করার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিগত ৩টি নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন দুবার।

রংপুর-৩:

রংপুর সদর উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের এলাকা নিয়ে এ আসন। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নিজে এবং তিনি যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এরশাদের নিজের বাড়ি হওয়ায় এই আসনে তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অন্য কোনও দলের কোনও প্রার্থী নেই।

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন এরশাদের ছোট ভাই জাতীয় পার্টির জিএম কাদের। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৬২ ভোট। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫৩ হাজার ৭৪৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজার রহমান।

২০০৮ সালে লাঙল প্রতীক নিয়ে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬ ভোট। আর পরাজিত হয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির কাইয়ুম মণ্ডল। তিনি পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৬৪০ ভোট।

২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এরশাদ।

আগামী নির্বাচনেও এ আসনে আবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সে কারণে ২-৩ মাস পর পর অথবা সুযোগ পেলেই তিনি তার নির্বাচনি এলাকায় আসেন। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও প্রার্থী নেই। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান। তিনি ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন।

একই অবস্থা বিএনপির। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনও প্রার্থী নেই তাদের। তবে সম্প্রতি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র পদপ্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ড তাকে গ্রিন সিগন্যালও দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

রংপুর-৬ আসনে আলোচনায় আছে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের নাম

রংপুর-৪:

পীরগাছা আর কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনটি। এ আসনটি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে। বর্তমান সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি। তিনি সুযোগ পেলেই নিজের নির্বাচনি এলাকায় আসেন, গণসংযোগ করেন। দলের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তিনি। ফলে আগামী নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলা যায়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী সেলিম ও শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম ভরসা দুজনেই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এ আসনে বিএনপির অবস্থান কিছুটা ভালো হলেও জামায়াতের একটি বিরাট সংখ্যক সমর্থক বা ভোটার আছে। ফলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা। বিগত ৩টি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করেও তাই মনে হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা। তিনি পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৬৩১ ভোট। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তারই আপন ভাই বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা। তিনি পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৮৩৫ ভোট। এরপর থেকে এ আসটি আওয়ামী লীগের দখলে। এখন রহিম ও করিম উদ্দিন ভরসার সন্তানরা এই আসন থেকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হয়ে রাজনীতিতে নেমেছেন।

রংপুর-৫:

মিঠাপুকুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান। ২০০৮ সাল থেকে এ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের ট্রেজারার হওয়ায় দলের প্রভাবশালী নেতা। আগামী নির্বাচনে তারই মনোনয়ন পাওয়ার কথা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে মিঠাপুকুরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে আশিকুর রহমানের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।  ফলে নেতাকর্মীরা কার্যত দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জাকির হোসেন ইতোমধ্যেই এমপি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং করছেন। ফলে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে দুজনের একজনকে মনোনয়ন দিয়ে এ আসনটি ধরে রাখা যাবে না বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে বিগত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী গোলাম রব্বানী প্রায় দেড় লাখ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যদিও তার বিরুদ্ধে নাশকতার অসংখ্য মামলা রয়েছে। তবে মিঠাপুকুরে জামায়াতের ভালো ভোট আছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখানে ভালো। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শিল্পপতি ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর। তিনি দুইবার নির্বাচন করে অল্প ব্যবধানে হেরেছেন এর আগে। তবে বিএনপির কোনও প্রার্থী নেই বললেই চলে।

মেয়র নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলাসহ বিএনপির প্রার্থীরা

রংপুর-৬:

এ আসনটি পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ির এলাকা। এ আসন থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জেতার পরে আসনটি ছেড়ে দেন শেখ হাসিনা। পরে এ আসনে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি নির্বাচিত হন। তবে আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনা এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি প্রার্থী হলে আবারও নিশ্চিতভাবে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে তিনি নিজে নির্বাচন না করলে এই আসন থেকে তার প্রতিনিধি হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি জিতবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নুরুল ইসলাম যাদু এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে জাতীয় পার্টির কাউকেই গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি।

এ আসনে বিগত ৩টি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,  ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নুর মোহাম্মদ মণ্ডল। তিনি পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৭৩০ ভোট এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৯৯১ ভোট। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ ভোট। অন্যদিকে লাঙল প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নুর মোহাম্মদ মণ্ডল। তিনি পেয়েছিলেন ৩৮ হাজার ৬৭২ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে আসনটি তিনি ছেড়ে দিলে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের শিরীন শারমিন চৌধুরী।

 নিজ দলকে শক্তিশালী দাবি করেছেন স্থানীয় নেতারা

রংপুরে এখন আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় দাবি করে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও রংপুরকে মেট্রোপলিটন সিটি ঘোষণাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘সারাদেশের কথা বাদ দিলাম। রংপুরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৬টি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হবে।’

এদিকে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির জানান, রংপুর এরশাদের দুর্গ। এই দুর্গে আঘাত হানার সামর্থ্য আওয়ামী লীগ কেন, কারোরই নেই। আগামী নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনেই তাদের দলের প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে বিএনপির জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার রংপুরের জনগণ বিএনপির পক্ষেই রায় দেবেন বলে তার বিশ্বাস।

তবে রংপুরের ৬টি আসন নিয়ে এবার একটু জটিলতা আছে বলে মনে করেন বর্ষীয়ান ব্যক্তিরা। যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট হয়, তাহলে কে কাকে কোন আসনে ছাড় দেবে সেটা বলা মুশকিল। কারণ, এরশাদ রংপুরে অনেকবারই বলেছেন, রংপুরের ৬টি আসনে কোনও ছাড় নয়। ফলে শেষ মুহূর্তে বলা সম্ভব হবে আসলে কী হবে। তবে এটা নিশ্চিত ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন জাতীয় পার্টি। অতীতের ভোটের পরিসংখ্যান ও সরেজমিন অবস্থা বলছে, অন্য কোনও দল এখানে খুব বেশি ফ্যাক্টর না।

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক