দেশের সবচেয়ে বড় গাড়িচোর চক্রের আরও পাঁচ সদস্যকে একটি প্রাইভেট কারসহ গ্রেফতার করেছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। এদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে। গত শনিবার (২০ অক্টোবর) ভোরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে এ বিষয়ে আজ রবিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীতে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ কলাকোপা গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে মো. মামুন (২৩), চাঁদপুরের মতলবের নাওজান গ্রামের আলমাস মিয়ার ছেলে মো. টিটু (২৮), পিরোজপুরের কাউখালির মেঘপাল গ্রামের আবদুল কাশেম আকন্দের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩০), বগুড়ার ধুনটের শেহুলিয়াবাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৩) ও ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার চরডাঙ্গা গ্রামের মো. টিটুর স্ত্রী শারমিন ওরফে রাণী (১৯)। তারা সবাই গাড়িচোর চক্রের সদস্য। বর্তমান নিবাস ঢাকার সাভারে। সেখান থেকেই সারাদেশে প্রাইভেট কার চুরির বিষয়টি এই চোরচক্র নিয়ন্ত্রণ করতো।
রবিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ জানান, বাংলাদেশের ট্রাক চুরির অন্যতম মূল হোতা মনির ও গিয়াসকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে প্রাইভেট কার চোরচক্রের সন্ধান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। এর তিন মাস পর শনিবার (২০ অক্টোবর) এই চক্রের পাঁচ সদস্যসহ আরও একটি কার উদ্ধার করা হয়েছে।
শহীদুল্লাহ জানান, তারা প্রথমে ভালো মানের একটি প্রাইভেট কারকে টার্গেট করে ভাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। ঘুরতে ঘুরতে চালকের সঙ্গে এক ধরনের সখ্যতা তৈরি করে এরা। পরে সুযোগ বুঝে পানীয়ের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করিয়ে চালককে অজ্ঞান করে। পরে সুবিধামত জায়গায় অজ্ঞান হওয়া ড্রাইভারকে ফেলে দেয়। এ পর্যন্ত জেলা পুলিশ ১৪টি চোরাই ট্রাক ও দুটি প্রাইভেট কারসহ মোট ১৬টি গাড়ি উদ্ধার করেছে। মোট গ্রেফতার আসামির সংখ্যা ১১ জন।
এসপি মো. শহীদুল্লাহ আরও জানান, গত ৬ জুন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে একটি ট্রাক চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। তদন্ত করতে গিয়ে চোরচক্রের সন্ধান পেয়ে একের পর এক এসব গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। চোরচক্রের সদস্যরাও গ্রেফতার হয়েছে।
এসপি মো. শহীদুল্লাহ জানান, উদ্ধার হওয়া ট্রাকগুলোর প্রায় সবই অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির। এই কোম্পানির ট্রাকের চেসিস নম্বর প্লেট পরিবর্তন করা সহজ হওয়ায় তারা এগুলোকেই টার্গেট করে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের ৫২৯টি ট্রাক চুরি হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ প্রায় ৮০টি ট্রাক চুরির তথ্য পেয়েছে। এগুলোরও বেশিরভাগ অশোক লেল্যান্ডের। এসব ট্রাক উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এসপি বলেন, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় গাড়িচোর চক্র। এদের সঙ্গে বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত আছেন। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া মাত্র তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।