X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাজশাহী-১: বর্তমান এমপি’র বিরুদ্ধে একাট্টা ‘সেভেন স্টার’

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০১আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:১০

রাজশাহী ১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন নিজ দলের অন্য সাত মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। যেকোনও মূল্যে সাংসদ ফারুক চৌধুরীকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনহীন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এখানে মনোনয়ন চাইতে পারেন। বিষয়টি এ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া বিএনপির আরও তিন নেতা অনেক দিন থেকেই এ আসনের প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। তবে এই নেতাদের চেয়ে জামায়াতই বড় দুশ্চিন্তার কারণ বিএনপির জন্য। কাকনহাটে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোট চান আওয়ামী লীগের ৭ নেতা

গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসনটি। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়াও এখানে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মতিউর রহমান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, মকবুল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আতাউর রহমান খান এবং জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব জেমস। এলাকায় তাদের উল্লেখ করা হচ্ছে সেভেন স্টার নামে। কাকনহাটে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোট চান আওয়ামী লীগের ৭ নেতা

বিভিন্ন সভায় সেভেন স্টারের নেতারা বলেছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর কারণে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাদের দাপটে আদর্শিক নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়েছিল। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে আদর্শিক নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য একেএম আতাউর রহমান খান বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে ত্যাগী নেতাকর্মী, ভোটারদের কোনও সম্পর্ক নাই। ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা বলছেন, প্রার্থী বদল করতে। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আছেন, তাই ভয়ে সবাই চুপ থাকে। কিন্তু ভোটের মাঠ তার উল্টা।’

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পুলিশের সাবেক আইজিপি মতিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমান এমপি রাজাকারদের আস্ফালন, জামায়াত কর্মীদের নাশকতা-অপতৎপরতা বন্ধে কোনও পদক্ষেপ নেননি। তিনি নাশকতা চলার সময় এলাকায়ও ছিলেন না। মানুষের পাশে দাঁড়াননি। অথচ এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে তারই প্রথমে দাঁড়ানোর কথা ছিল। তিনি এলাকার কোনও উন্নয়ন করতে পারেননি। উন্নয়ন বলতে গেলে এক কথায়- জিরো। সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। তিনি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত না করে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের দলে যোগদান করিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ত্যাগীরা তার পেছনে কেউ নেই, কারণ তিনি দলীয় নেতাদেরও নির্যাতন করেছেন। এমনকি গণসংযোগের সময় তার (ওমর ফারুক চৌধুরী) লোকজন দিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। এজন্য মামলাও করা হয়েছে।’ গণসংযোগে এমপি ওমর ফারুক

বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সমালোচনা করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন খান বলেন, ‘তার কোনও আদর্শ নেই। ২০০০ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেই তার হৃদ্যতা। তার পেছনে দলের ত্যাগী কোনও নেতা নেই। তাকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের কোনও নেতা-কর্মী ভোটকেন্দ্রে যাবেন কিনা সন্দেহ আছে। তিনি দলকে বিভক্ত করেছেন। অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তাকে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা তার পেছনে থাকবো।’

তবে নিজ দলের নেতাদের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনোনয়ন নিয়ে চিন্তা করছি না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যাকে দিয়ে মনে করবেন এই আসনটিতে দলকে জেতানো সম্ভব, তাকেই মনোনয়ন দিয়ে দলকে জিতিয়ে আনবেন। যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তারা সবাই দলের পক্ষে কাজ করলে ভালো। কারও বিরুদ্ধে কথা বলা খারাপ। আমি এলাকায় জনগণের সঙ্গে আছি। ভোটাররা আমার পক্ষে আছেন।’

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত সচিব জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহিন।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের কাছে পরাজিত হন। ২০০৭ সালে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মগোপন করেন। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বড় ভাই সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রবীণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া, জামায়াতপ্রীতি ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা অভিযোগ উঠে। ফলে তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাত নেতা।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক। দুই দফায় মন্ত্রীও ছিলেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোদাগাড়ী-তানোরে তার বিকল্প কোনও নেতা এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। তাই আসছে নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে আসনটি থেকে জোটগতভাবে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ও ১৯৮৬ সালে এমপি নির্বাচিত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ব্যারিস্টার আমিনুলের কর্মী-সমর্থকরা। কেননা মুজিবুর রহমানের কেন্দ্রীয়ভাবে শক্ত প্রভাব রয়েছে। জোটগতভাবে নির্বাচনে মুজিবুর রহমানও মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আশা করছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা।

রাজশাহী নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনে এবার মোট ভোটারের সংখ্যা ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৩০৮ জন। যার মধ্যে ৭ হাজার ৭৮ জন বেশি নারী ভোটার। রাজশাহীতে এবার মোট পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৫ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৩। কেন্দ্র সংখ্যা ৬৯৫টি।

রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে রাজশাহী-১ (তানোর- গোদাগাড়ী) আসনে ভোটারের সংখ্যা  সবচাইতে বেশি। আর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ভোটারের সংখ্যা সবচাইতে কম। রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৯ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৬৫ ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৪। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৫টি।

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাপ্তাহিক ডিজিটাল সেভিংস সেবা চালু করলো বিকাশ
সাপ্তাহিক ডিজিটাল সেভিংস সেবা চালু করলো বিকাশ
একান্ত আলাপে অস্কারজয়ীর মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
কান উৎসব ২০২৪সোনার বাংলা, আই ওয়ান্ট টু ভালোবাসি: এ আর রাহমান
প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই: পুলিশের এসআইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই: পুলিশের এসআইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এক এজেন্সির ২৬০ হজযাত্রীর কারও ভিসা হয়নি, কারণ দর্শানো নির্দেশ
এক এজেন্সির ২৬০ হজযাত্রীর কারও ভিসা হয়নি, কারণ দর্শানো নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা