X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে’ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট
১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৩০আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০৭

ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বাগেরহাটের শরণখোলায় সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে’ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিজের জমিতে গৃহ নির্মাণ আশ্রয়ণ-২, প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য আধাপাকা বসত ঘর নির্মাণে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘর ও টয়লেট নির্মাণের অনুকূলে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বসত ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে উপজেলাজুড়ে। তবে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঘরগুলো বণ্টন করার ফলে প্রকৃত হতদরিদ্ররা এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুযোগ থেকে অনেকটা বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্রদের বদলে ঘর বরাদ্দের নামের তালিকায় স্থান পেয়েছেন সমাজের বিত্তশালীরাও। সরকারদলীয় কিছু নেতা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে উপজেলার কোথাও কোথাও আবার সরকারি জমিসহ অন্যের বসতবাড়িতে অনেক ভূমিহীন ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

এছাড়াও ঘর বরাদ্দের নামে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এমনকি প্রাথমিকভাবে ঘর বরাদ্দের তালিকায় কারও কারও নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ঘুষ না দেওয়ায় তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। আইনগতভাবে ঠিকাদার নিয়োগের কোনও বিধান না থাকলেও নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু ঠিকাদারও। তারা ইট, বালু, সিমেন্ট, খোয়া, ঢেউ টিনসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে,তারা সরবরাহ করছেন নিম্নমানের উপকরণ কম এবং তাও বরাদ্দের চেয়ে কম পরিমাণে। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের খরচ (ক্যারিং) চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুক্তভোগীদের ওপর।

অপরদিকে, কিছু স্বার্থান্নেষী ব্যক্তি নিজ নামে ঘর বরাদ্দ পেয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলীয় এলাকা শরণখোলা উপজেলায় দু-দফায় ৬৭২টি ঘর হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর ও একটি টয়লেট নির্মাণের অনুকূলে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে উপকরণ হিসাবে ইট, সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। বেড়া, জানালা ও দরজার জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ থাকলেও তাতেও ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা উত্তর কদমতলা, রাজৈর, আমড়াগাছিয়া, বগী, চালিতাবুনিয়া এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের থাকলেও তা আমাদের নিজ খরচে পরিবহন করতে হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদাররা ইট,সিমেন্ট,খোয়া,বালু,কাঠ ইত্যাদি বরাদ্দের চেয়েও কম সরবরাহ করছে বলে জানান। ঘরের কাজ নিয়েও আছে নানান দ্বিমত। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ঘরের কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হওয়ার কথা বললেও বাস্তবে সরেজমিনে ৪০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো.হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর নিয়ে উপজেলাজুড়ে এক প্রকার হরিলুট চলছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঢালাওভাবে ঘর বরাদ্দের তালিকা করায় প্রকৃত দরিদ্ররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদ পড়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদার সংশ্লিষ্টরা ঘর প্রতি সর্বসাকুল্যে ৫৫-৬০ হাজার টাকা খরচ করে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ঘর তৈরি করে যাচ্ছে।

ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মইনুল হোসেন টিপু বলেন, আমার ইউনিয়নে ঘর বরাদ্দের খবর আমার জানা নাই। যে নিয়মে ঘর নির্মাণ করার কথা তা না করে নিম্নমানের ঘর তৈরি করায় উন্নয়নমুখী সরকারের বদনাম হচ্ছে।

রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, হতদরিদ্রদের মাঝে ঘর উপহার দেওয়ার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতী উদ্যোগ। যারা দরিদ্রদের এ ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৪ আসনের এমপি আলহাজ ডা.মোজাম্মেল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর নিয়ে উপজেলাজুড়ে এক প্রকার হরিলুট চলছে। এই হরিলুটের সঙ্গে উপজেলার সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি জড়িত। আমি দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করি  এবং অবিলম্বে সব অভিযুক্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।

তবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি লিংকন বিশ্বাস জানান, অনিয়মের বিষয়টি তার জানা নাই। ঘরের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে।

 

 

 

 

 

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি