প্রায় ৩৫০ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা সবাই ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণ করে প্রতারণার শিকার হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি কম্পিউটার দোকানে এই ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে ওই দোকানিসহ সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে আটক করেছে রাজশাহীর মতিহার থানা পুলিশ।
ওই দোকানির নাম মোস্তফা আহমেদ মামুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের স্পন্দন কম্পিউটার নামের দোকানের মালিক। আটক অপর দুজন হলেন আরিফ হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। তারা মামুনের পাশের দোকানে কাজ করতেন।
মতিহার থানার ওসি শাহাদত হোসেন বলেন, ‘প্রক্টর দফতর থেকে আমরা তিন দোকানিকে প্রতারণার ঘটনায় আটক করেছি। তারা এখন থানায় আছে। রফিকুল ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর কেউ যদি মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’
পিএসসির ওয়েসবাইটে আছে, ফরম পূরণের জন্য ওয়েসবাইটে গিয়ে প্রথমে ফরম পূরণ করতে হয়। তারপর একটি ইউজার আইডি নম্বর আসে প্রার্থীর মোবাইল নম্বরে। এরপর ওই নম্বর দিয়ে পেমেন্ট দিলেই আবেদন চূড়ান্ত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাটাগরিতে আবেদনের জন্য ৭০৫ টাকা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্যাটাগরিতে আবেদন করলে ১০৫ টাকা পেমেন্ট দিতে হয়।
প্রতারণার শিকার আবেদনকারীরা জানান, মামুনের দোকানে ফরম পূরণ শেষে রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ইউজার আইডি নম্বার লিখে রেখে তাদের পরদিন প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলা হতো। কিন্তু, মামুন সাধারণ ক্যাটাগরিতে আবেদনের জন্য নেওয়া ৭০৫ টাকা পেমেন্ট না করে প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরিতে ফরম পূরণ করে ১০৫ টাকা পেমেন্ট দিয়ে প্রবেশপত্র ডাইনলোড দিতেন। বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে এক আবেদনকারী তার প্রবেশপত্রের সঙ্গে মোবাইলে আসা ইউজার আইডি কোডটির মিল না থাকায় বিষয়টি তার এক বন্ধুকে জানান। পরে তারা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তাদের একই সমস্যা দেখতে পান। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে তারা মামুনের দোকানে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে খবর দেন। মামুনের প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এরপর মামুনকে আটক করে দুপুর ১টার দিকে প্রক্টর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরিফ ও রফিকুলকেও পুলিশ আটক করে। এ সময় প্রক্টর দফতরে দুইশ‘ জনের অধিক ভুক্তভোগী আবেদনকারী ভিড় জমান। তাদের মধ্যে একজন মামুনের ওপর চড়াও হন এবং তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। শিক্ষার্থীরা বিষয়টির সমাধান দাবি করলে প্রক্টর পিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিষয়টি বিবেচনা করে কর্ম কমিশন থেকে শিক্ষার্থীদের পুনরায় আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়।
দোকানদার মামুন তার দোষ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় এ কাজ করেছি। আমার ভুল হয়েছে। আমি সব টাকা ফিরিয়ে দেবো।’ পরে প্রক্টর দফতরে তিনি নগদ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং বাকি টাকা শিগগিরই পরিশোধ করবে বলে জানান। তবে রফিকুল ও আরিফ এ ব্যাপারে জড়িত নয় বলে দাবি করেন দোকানদার মামুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘মামুন যেটি করেছে, তা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি নজরে না এলে অসংখ্য শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়ে যেত। আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পিএসসিতে যোগাযোগ করেছি। তারা শিক্ষার্থীদের পুনরায় আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। এক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরির আবেদন বাতিল করে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।’