X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের কোনও আসনেই জাপাকে ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ

বরিশাল প্রতিনিধি
১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪১আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১১:১৫

 রুহুল আমীন হাওলাদার, নাসির জাহান রত্না, গোলাম কিবরিয়া টিপু ও রুস্তম আলী ফরাজী ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি নির্বাচিত হন। জোট থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ (দুমকি-মির্জাগঞ্জ) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের প্রার্থী করা হয়। এবারের নির্বাচনে বরিশালের চারটি আসনই চাচ্ছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, বরিশালে তাদের দলের জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া, তাই মহাজোট থেকে বরিশালের সবগুলো আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দিতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা একটিতেও ছাড় দিতে নারাজ। তারা বলছেন, ওই সব আসনে শরিক দলের প্রার্থী এমপি থাকার কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার একটি আসনেও জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চান না তারা।

পটুয়াখালী-১ (দুমকি-মির্জাগঞ্জ) আসন থেকে গত নির্বাচনে মহাজোট থেকে প্রার্থী করা হয় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরাজিত করে রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আবারও এ আসনে মনোনয়ন চান। এ আসনে রুহুল আমীনের বিপরীতে মনোনয়ন চাচ্ছেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাসহ আরও কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিন দলের বড় নেতারাই এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে রুহুল আমিন হওলাদার আবারও ওই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।

এই আসনে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুবার জিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহজাহান মিয়া। কিন্তু পরে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচন জোটগতভাবে না হলেও মহাজোটের শরিক জাপার প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে জয়ী করতেই ওই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

তবে আসনটি এবার ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ। শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি বিএনপির প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেছিলাম। পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছি। গত পাঁচ বছর এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নেই। এরপরও আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি।’

শাহজাহান মিয়া ছাড়াও শক্তভাবে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় দলীয়ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। আমাদের এই তথ্য মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। এ কারণেই এই আসনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এলাকার লোকজনকে চাঁদাবাজি, অত্যাচার, জুলুমের শিকার হতে হয়নি। দল-মতনির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে ছিলেন। এলাকার ভোটাররাও তাকে এই আসন থেকে নির্বাচন করতে বলছেন। তারপরও যদি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন হয়, তাহলে জোটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটি বর্তমানে জাতীয় পার্টির দখলে। এখানকার এমপি নাসরিন জাহান রত্ন জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীনের স্ত্রী। আবারও জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী হতে চান তিনি। তবে জোটের প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার দাবি উঠেছে এই আসন থেকে। গুঞ্জন উঠেছে এ আসনে যদি এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবে। জোটের বাইরে এখান থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজ মল্লিক, উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু ও পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া।

ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে এই আসন থেকে জোটের প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগ সমর্থকগোষ্ঠী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকেরগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল হাফিজ মল্লিককে নৌকার প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না ১০ বছর বাকেরগঞ্জের এমপি থাকলেও তারা এলাকার জনগণের সঙ্গে কোনও সুসম্পর্ক রাখেননি। ফলে গত ১০ বছরে এলাকাটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অথচ এ সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাকেরগঞ্জ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হলে নিশ্চিত জয় লাভ করবে।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে আবারও জোটগতভাবে মনোনয়ন চাচ্ছেন সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় জাপা নেতা গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে জোটগত নির্বাচন করে এমপি হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান। বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় টিপুর কাছে পরাজিত হন সেলিমা রহমান। ২০১৪ সালে এ আসনে জাপাকে বাদ দিয়ে জোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতানকে মনোনয়ন দিলে তিনি গোলাম কিবরিয়া টিপুকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী শেখ টিপু সুলতান উন্নয়ন কাজে একেবারেই ফ্লপ হয়েছেন। এ কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে।

ইতিমধ্যে এই আসনের জন্য মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বাবুগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন স্বপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক মিজানুর রহমান। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অভিযোগ গত পাঁচ বছর বাবুগঞ্জ ও মুলাদীতে তেমন কোনও কাজই করেননি টিপু সুলতান। যে কারণে এলাকাবাসী তাকে ভালো চোখে দেখছেন না। তার কারণে বদনামের ভাগ নিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। তাই এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি উঠেছে।

এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছাড়াও যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক জোটবদ্ধভাবে মনোনয়ন চেয়েছেন। তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। গোলাম কিবরিয়া টিপু মনে করেন- এই আসনটি জাতীয় পার্টির। তার আমলে ওই দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। এ কারণে সেখানকার বাসিন্দারা আবারও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায়। তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন ধরে রাখতে হলে তাকেই প্রার্থী করতে হবে।’ তিনি আশাবাদী জোটগতভাবে নির্বাচনে তাকেই প্রার্থী করা হবে এই আসন থেকে।

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়ীয়া) আসনের তিনবারের এমপি রুস্তুম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকার পর এ বছর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেন, আরেক সহসভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তাজউদ্দীন, যুব মহিলা লীগের (কেন্দ্রীয়) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভিন ডলি। 

রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, ‘আমি জোটগতভাবে নির্বাচন করতে চাই।’ জোটগতভাবে মনোনয়ন না পেলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন না পাওয়ার কোনও অবকাশ নেই। দেশে কতজন এমপি আছে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি হতে পারে? আমি কিন্তু বিজয়ী হয়েছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আশীর্বাদ। কারণ আমি দাঁড়ালে অন্য প্রার্থীর চেয়ে ৩-৪ গুণ ভোট বেশি পাবো। নির্বাচন এলে যোগ্যতা থাক আর না থাক প্রত্যেকেই দাঁড়াতে চান। এটা ভাল সিগন্যাল নয়।’



/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!