X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে শীত, বাড়ছে গাছিদের ব্যস্ততা

সেলিম রেজা, বেনাপোল
১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:২২আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৩৫

আসছে শীত, বাড়ছে গাছিদের ব্যস্ততা

‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’-শুধু কথা নয়, এটি বাস্তবতাও। শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। মানুষের মনেও খেজুরের রসের চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে। কুয়াশার সকালে দুয়েক গ্লাস রস মুখে ঢালার আমেজই আলাদা। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রাথমকি প্রস্তুতি ও পরির্চযা শুরু করেছেন। স্থানীয় ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘গাছ তোলা’। এরপরই আবার গাছে চাঁছ দিয়ে নলি ও গুজা লাগানো হবে।

খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিনটি স্তর পেরোতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই রস আহরণ শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষত রাস্তার পাশে এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা ও চাঁছার দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে ঘাটে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের ফুলসারা ও বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর, বড় আচড়া, গাতিপাড়া, খড়িডাঙ্গা, রাজাপুর, বারোপোতাসহ বিভিন্ন গ্রাম ও কাঁচা সড়কের পাশে খেজুর গাছ কাটার (পরির্চযা) এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। আর কিছুদিন পরই মধু বৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড় আর পাটালি তৈরির উৎসব।

যশোরের ঐতহ্যবাহী গুড়-পাটালির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। শার্শার জিরেনগাছার বিখ্যাত গুড়-পাটালি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলে যায়।

আসছে শীত, বাড়ছে গাছিদের ব্যস্ততা

এই তো, আর মাত্র কয়েকটা দিন, বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার আশেপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি মুড়কি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলুনে গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলুনে গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মেশালে আরও সুস্বাদু লাগে।

খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মতো বপন করে বা সার মাটি দিয়ে তৈরি করা লাগে না। প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বীজ) থেকে চারা জন্মায়। সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান। সাধারণত ক্ষেতের আইলের ওপর, রাস্তার পাশে বা উন্মুক্ত জমিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। তবে খেজুর গাছ ইট-ভাটার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় রস, গুড় ও পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে যাচ্ছে বেনাপোল ও শার্শা আশেপাশের এলাকায়। এখন আর আগের মতো মাঠ ভরা খেজুর বাগান দেখা যায় না, নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই কম। নলুন গুড়, পাটালি পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে গাছিরা গাছ পরিষ্কার করার জন্য গাছি দা, দড়ি-তৈরিসহ ভাড় (মাটির ঠিলা) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

বড় আঁচড়া গ্রামের চাষি হোসেন আলী জানান- এবার গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে।

বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামের চাষি জাহিদ হোসেন বলেন,‘বাজারে ভেজাল গুড়ের কারণে আমাদের আসল গুড়ের কদর কম।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন,‘ভেজাল গুড়ের দাম কম, তাই খরিদ্দারদের চাহিদাও সেদিকে। আসল গুড়ের দাম একটু বেশি, তাই খরিদ্দারও কম।’

বারোপোতা গ্রামের ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রতি শীত মৌসুমে গুড় এবং রস বানানোর জন্য ১০০-১২০টি খেজুর গাছ পরিচর্যা করে প্রস্তুত করি। প্রতি বছরের শীত মৌসুমে আড়াই থেকে তিন মাস গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। খরচের তুলনায় লাভ বেশি। এই তিন মাসে খরচ বাদে প্রায় এক লাখ টাকা আমার সাশ্রয় হয়।’

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, মাত্র একমাস হলো এখানে যোগদান করেছি। আমার জানা মতে, বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছের চাষ এখানে নেই। কোনও চাষি যদি বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছের চাষ করতে চান, আমরা তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।

ভেজাল গুড়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভেজাল বলতে চিনির দাম কম, গুড়ের দাম বেশি, সেই হিসেবে অনেক চাষি গুড় পরিমাণে বেশি করার জন্য রসের সঙ্গে চিনি এবং এক ধরনের হাইডোজ পাওডার (খাওয়ার শোডা) মেশায়। তাছাড়া অন্য কিছু না।’

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়