X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুড়ীতে গাছ থেকে ঝরছে কাঁচা কমলা, উদ্বিগ্ন চাষি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:১৮আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৫

গাছে কাঁচা কমলা (ছবি– প্রতিনিধি)

এবার কমলার ফলন ভালো হয়েছে মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায়। তবু উদ্বিগ্ন চাষিরা। এর কারণ বানরের আক্রমণ ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কাঁচা কমলার ঝরে পড়া। এ ছাড়া, মৌসুমের শুরুতেই ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় হাসি নেই চাষিদের মুখে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবছর জেলার জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২৫০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জুড়ী উপজেলায় ১৫০, বড়লেখা ৭৫ একর এবং কুলাউড়ামহ অন্যান্য উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ২৫ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। পুরো জেলায় বড় ১৩০টি বাগানের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট কমলা বাগান। কমলাচাষি রয়েছেন ৪৫২ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলা উৎপাদন হয়েছিল তিন থেকে সাড়ে তিন টন। এ বছর উৎপাদন হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার টন।

ঝরে পড়া কমলা কুড়িয়ে আনছেন চাষিরা (ছবি– প্রতিনিধি)

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া ও লালছড়ার পাহাড়ি এলাকায় কমলা বাগান চাষিরা জানান, গাছে গাছে সবুজ সোনালি ফল ঝুলে আছে। গাছভর্তি ফলন না হলেও কোনও গাছই খালি নেই, কমবেশি সব গাছেই রয়েছে ফল।

লালছড়া গ্রামের কমলাচাষি রুবেল মিয়া ও মুর্শেদ মিয়া জানান, প্রায় ১ হাজার কমলা গাছ রয়েছে তাদের। এবছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন। তবে ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে সঠিক মুল্য পাচ্ছেন না তারা। ভারতীয় কমলা আমদানির বন্ধ করার দাবিও জানান তারা।

রূপাছড়ার কমলাচাষি ফারুক মিয়া ও মো. বাবুল মিয়া জানান, তাদের বাগানে শ’ দুয়েক গাছ আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছে কমলা এসেছে। কিন্তু বানরের উৎপাতে প্রতিদিন গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ছে।’

রূপাছড়ার ফখর উদ্দিন বলেন, ‘একটা গাছে ৫০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমলা ধরে। কিন্তু ৪০ শতাংশ কমলা ঝরে পড়ছে। এ কারণে চাষিরা আগাম বিক্রি করে ফেলছেন। কমলা বড় হওয়ার আর সময় পায় না। মিষ্টি হতে পারে না। যার কারণে কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

লালছড়ার মো. মন্তু মিয়া জানান, ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ঝরে পড়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগে কমলা চাষের একটি প্রকল্প ছিল। ২০০৮ থেকে সেই প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পের সময় প্রশিক্ষণ ও তাৎক্ষণিক পরামর্শে কমলাচাষিরা উপকৃত হতেন। সেই প্রকল্প আবার চালুর দাবি জানান তিনি

কাঁচা কমলা থেকে পাকাগুলো আলাদা করছেন দুই নারী (ছবি– প্রতিনিধি)

লালছড়ার খালেদ আহমদ বলেন, ‘অনেক চাষিই অভাবি। এরা অগ্রিম বিক্রি করে ফেলে কমলা। এর জন্য সঠিক দাম পায় না।’

কমলা চাষিরা জানান, তারা স্থানীয়ভাবে পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বলেন, ‘এখানে নাগপুরী, দার্জিলিং ও খাসি –এই তিন জাতের কমলা চাষ হয়। এর মধ্যে খাসি জাতেরই বেশি চাষ হয়ে থাকে। ফল পাকার সময়েই গান্ধি পোকা আক্রমণ করে। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিই চাষিদের।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, কমলার উৎপাদন নিশ্চিত করতে বর্ষার পর পর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসে সেচ দিলে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হবে। কমলা গাছে কার্টাপ গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করলে গান্ধি, লিপমাইনরসহ অন্যান্য পোকা দমন সম্ভব। লেবু জাতীয় ফলে আগা-মরা (ডাই বেক) ও গামোসিস (গাছ থেকে আঠার মতো কষ ঝরা) ধরনের রোগ দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড ও হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর তিন বার স্প্রে করলে এই জাতীয় রোগ দমন করা যায়।

এই ব্যাপারে জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, কমলা বাগানগুলোতে রোগ-বালাইসহ নানা সমস্যায় ভোগান্তি নিরসনের ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়মিত সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের অভাবে কমলা ঝরে পড়ছে। গাছে যে পরিমাণ কমলা আসে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় গাছ তা ধরে রাখতে পারে না। নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে গান্ধি পোকা দমন সম্ভব। এ ছাড়া, লেবু জাতীয় গাছে আগা-মরা রোগ হয়ে থাকে। এটাতেও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।

 

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা