X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
২২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৫৩আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৫৭

বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক ও উচ্চফলনশীল ড্রাগন ফলের ফল চাষাবাদ বাড়ছে। পুষ্টি ও ঔষধি গুনাগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ক্যাকটাস প্রজাতির ড্রাগন ফলের এই জনপ্রিয়তা। বাগান থেকেই ফলটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকা কেজি দরে। ডায়েবেটিস-ক্যান্সার প্রতিরোধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের উপকারিতা থাকার কথা জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। তারা মনে করেন, দেশে ড্রাগন ফলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফলটি বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। তবে ফলটির চাষাবাদ শুরুর জন্য শুরুতে বেশ বড় অঙ্কের বিনিয়োগ লাগে। তাই বড় সাফল্য পেতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার। পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমেরিকা, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে ড্রাগন একটি জনপ্রিয় ফল। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় লাল, সাদা এবং হলুদ ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা । অল্প জায়গায় স্বল্প পরিচর্যাতেই চারা রোপনের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। প্রথমবারেই সফলতা পাওয়ায় চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে এই ফলের চাষবাদ শুরু করেছেন। সুস্বাদু এ ফল উৎপাদনের শুরুতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও অন্যান্য ফসলের চেয়ে এটি লাভজনক। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ড্রাগন ফলের বাগান।

সংসারের কাজকর্মের পর ড্রাগন ফলের বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আয় করছেন এলাকার নারীরাও। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষিদের গড়ে তোলা ছোট ছোট বাগানগুলোর সাফল্য অন্য কৃষকদের প্রেরণা দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

জেলার বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী এলাকার ড্রাগন ফল চাষি মো. রাশেদ প্রধান বলেছেন, ‘পুষ্টি ও ঔষধি গুণ থাকায় আমি ৬ বিঘা জমিতে এই ফলের চারা রোপণ করেছি। সব মিলিয়ে আমার ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ ফল চাষাবাদে শুরুতে বেশি টাকা লাগে। তবে একবার গাছ হয়ে গেলে ৩০-৪০ বছর চলে। বছরে ২-৩ বার ফল উৎপাদন করা যায়। যা খরচ হয়েছে তা ২-৩ বছরেই উঠে আসবে। এরপর আমি লাভের মুখ দেখতে পারব।’

জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া এলাকার ড্রাগন চাষি আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামিম জানিয়েছেন, ‘ঢাকায় ফলের দোকানে ফল কিনতে গিয়ে এই ফলটি আমি দেখতে পাই। তারপর ৩-৪ বছর আগে দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে ঢাকা খামারবাড়ি থেকে ৮০টি চারা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি। এ ফল অনেক উপকারি, খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজারে এর ভালো দামও রয়েছে। অল্প পরিচর্যাতেই ফল ধরা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই চাষের সুবিধা রয়েছে। আমি নিজে চারা করে উচু জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ফল চাষের উদ্যোগ নিয়েছি।’

ড্রাগন চাষি মো. ইসমাইল হোসেনের ভাষ্য, ‘ইউটিউব থেকে জেনেছি, এ ফলের উপকারিতা অনেক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচুর। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত এন্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভর করে। তাই আমরা এ ফল চাষের উদ্যোগ নেই। দুইজন শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। প্রথম বছরেই তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। এবছর পাঁচ লাখ টাকার ফল বিক্রি করার আশা করছি। গ্রাগ্ন ফলের বাগান থেকে বছরে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। শীতের সময় ফল পাওয়া যায় না। আরও ৯ বিঘা জমিতে নতুন করে বাগান করা হয়েছে।’

ড্রাগন চাষি মো. ইসমাইল আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত। চার-পাঁচ বছর বয়সের একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ড্রাগন ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করা যায়।’

বোদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামন অর রশিদের ভাষ্য, ‘পঞ্চগড়ের কৃষকরা এখন পুরাতন গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর নির্ভশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করে লাভজনক কৃষি পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, মাঠ পার্যয়ে তদারকি এবং এর চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকে অবহিতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে।’

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেনের বক্তব্য, ‘সব ধরণের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম। একবার এ ফল চাষ করলে ২০-২৫ বছর ফল পাওয়া যায়। বাগান করতে প্রাথমিকভাবে খরচটা একটু বেশি হয়। এ ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে জটিল রোগসহ আরও অনেক রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এছাড়া এ ফল ডায়বেটিস ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কোলেস্টরেল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ্যটা করে। অ্যাজমা ও ঠাণ্ডা-কাশির রোগীদের জন্যও ফলতই বিশেষ উপকারী। ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার থাকে যা পেটের পীড়া নিরাময় ও সুস্থ লিভারের জন্য উপকারী। সালাদ তৈরিতে ও বিউটিফিকেশনের কাজেও ড্রাগন ফল ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ফল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’

/এমএফ/এএমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের সভায় সভাপতিত্ব করা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা: স্পিকার
এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের সভায় সভাপতিত্ব করা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা: স্পিকার
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে