X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারম্যান পলাতক, ইউনিয়ন পরিষদে ‘অরাজকতা’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২২ নভেম্বর ২০১৮, ১১:২২আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৬

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর চরাঞ্চল বেষ্টিত চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ। এলাকাটি মাদক বেচাকেনার অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত। সারাদেশে  মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সেবাসহ উন্নয়ন কার্যক্রম।  একইসঙ্গে বেড়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে কাগজপত্র ও রেজুলেশনে স্বাক্ষর করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সারাবছরই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন অস্ত্র, গান পাউডার, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এসব।  ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুও এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। শাহীদ রানা টিপু

এদিকে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এনে দেওয়ার নাম করে তার সমর্থক ও ইউপি’র কর্মচারীরা জন্মনিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেবা নিতে আসা  ইউনিয়নের নাগরিক মানিক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির সুযোগে তথ্য উদ্যোক্তা জন্মনিবন্ধনের ৫০ টাকা ফি এর জায়গায় ১৫০-৫০০ টাকা, ট্রেড লাইন্সেসের ফি ২০০ টাকার জায়গায় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। আর কেউ অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমার মতো সেবা নিতে আসা আরও অনেকেই চেয়ারম্যান কোথায় জানতে চাইলে তথ্য উদ্যোক্তা বলেন, চেয়ারম্যানকে দিয়ে কী হবে, টাকা দেন আমিই সব কাজ করে দেবো।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন সচিব তানজিমুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পলাতক চেয়ারম্যান গোপন স্থান থেকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করায় পরিষদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে পরিষদে দ্বন্দ্ব থাকায় এবং চেয়ারম্যান প্রতাপশালী হওয়ায় তার ওপর অনাস্থা যেমন  আনা যাচ্ছে না, তেমনি এলাকাবাসিও তার  ভয়ে মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারছেন না।’

প্যানেল চেয়ারমান শাহীন আকতার বিউটি বলেন, ‘আমি নামেমাত্র প্যানেল চেয়ারম্যান। আমাকে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা দেননি চেয়ারম্যান। উল্টো চেয়ারম্যান  প্রতাপশালী হওয়ায় স্বশরীরে পরিষদে উপস্থিত না থেকেও আইন লঙ্ঘন করে গোপনস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও রেজুলেশনে সাক্ষর করছেন।’ চেয়ারম্যান পলাতক, ইউনিয়ন পরিষদে ‘অরাজকতা’

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্যানেল চেয়ারম্যানরা জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে না বলেই তাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’ কী কারণে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত এ বিষয়ে কিছু না বললেও চেয়ারম্যান জানান, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কাজ করছেন তিনি।

সদর ৩ আসনের এমপি আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নিতে বলেছেন, সেখানে মাদক তালিকায় শীর্ষ ব্যবসায়ী এই চেয়ারম্যান দেশে থেকেও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে, এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?  মাদকবিরোধী অভিযানে চুনোপুটিরাই শুধু ধরা পড়ছে। অথচ দেশে থাকার পরও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা কেন ধরা পড়ছে না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গোপনস্থান থেকে মোবাইল ব্যবহার করে এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনস্থদের মাধ্যমে কাগজপত্র সই করছেন চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু। থানায় একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে সে দ্রুত মোবাইল সিম পরিবর্তন করার কারণে  তার অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। কিন্তু দ্রুত তাকে ধরা পড়তেই হবে।’

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুই মাস ছুটির আবেদন করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিতির বিষয়ে যথাযথ ব্যাখা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে চেয়ারম্যানের প্রতি। আর সন্তোষজনক ব্যাখা না পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর  ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ-২০০৯ এর ৪০ ধারায় উল্লেখ আছে, বছরে চেয়ারম্যানরা তিন মাস ছুটি নিতে পারবেন। তবে যথাযথ কারণ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ তেকে এর অনুমোদন নিতে হবে। অথচ মাদকের শীর্ষ ব্যবসায়ী চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  তা অনুসরণ না করেই দীর্ঘ ছয় মাস ধরে পলাতক রয়েছেন।’

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সরেজমিনে ইউপি পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি চেয়ারম্যান পরিষদে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির পরও কেন ঊদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি, এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’

 

 

/এমএফ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী