গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথমবারের মতো কারাবন্দিদের মধ্যে বালিশ বিতরণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রত্যেক বন্দি তিনটি কম্বল পেত। যার একটি বালিশ হিসেবে ব্যবহার হতো। ধাপে ধাপে দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৯৫ হাজার বন্দিকে বালিশ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কারা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্দিদের মাঝে বালিশ বিতরণ করা হলো।’
আইজি (প্রিজন) বলেন, ‘আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান আরও অনেক বেশি বাড়াতে হবে। দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৯৫ হাজার বন্দির চিকিৎসা সেবা দিতে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক ও ১১টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে কারাগারের জন্য আরও চিকিৎসক এবং তাদের সহযোগী নিয়োগ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহ বাড়াতে হবে। এছাড়াও কারাগারে মাদকাসক্তদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলেই কারাগারে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি পাবে।’
সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অন্তত পাঁচ গুণ বেশি বন্দি রয়েছে। বন্দিদের কথা বিবেচনা করে কারাগারগুলোকে আরও সম্প্রসারণ করে ধারণ ক্ষমতা এবং সেবার মান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলেই কারাগারে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।’
গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ বালিশ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইজি (প্রিজন)। এসময় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র সুপার সুব্রত কুমার বালা, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাকারের জেলার বিকাশ রায়হান, ডেপুটি জেলার মো. তারিকুল ইসলামসহ কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি এদিন ওই অনুষ্ঠানে বন্দিদের জন্য কয়েকটি টিভিসেটও সরবরাহ করেন।
আইজি (প্রিজন) আরো বলেন, ‘শিগগিরই কারাগারের বন্দিদের সকালের নাস্তা পরিবর্তন করা হচ্ছে। আগের রুটির সঙ্গে শুকনা গুড়ের টুকরা দেওয়ার পরিবর্তে সবজি, হালুয়া এবং খিচুরিসহ সপ্তাহের একেকদিন একেক আইটেম নাস্তা সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে বন্দিদের নাস্তার ব্যয় হিসেব করে আর্থিক অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি এর অনুমোদন ও বাস্তবায়ন শিগগিরই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ যাবত বৃটিশ সময়কার আইন-কানুন অনুয়ায়ী আমাদের দেশের কারাগারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে পরিচালিত করতে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য নীতিমালা ও আইনের কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সে আইন পরিবর্তিত হচ্ছে। সেটার জন্য ইতোমধ্যে খসড়া নীতিমালা ও আইন লেখা হয়ে গেছে। সেটা পার্লামেন্ট থেকে অনুমোদন পেলেও আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারবো।’
আইজি (প্রিজন) আরও বলেন, ‘পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর কারাবন্দিরা টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে ৬৮টি কারাকারে বুথ স্থাপনের কাজ শেষ হলেই কারাবন্দিরা সে সুযোগ পাবেন। এছাড়া কারাবন্দিদের তৈরি করা পণ্য ও দ্রব্য বিক্রি করে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তার অর্ধেক অর্থও পারিশ্রমিক হিসেবে বন্দিদের দেওয়া হবে।’ এর আগে তিনি বন্দিদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন এবং কারাগার পরিদর্শন করেন।
এ আইজি (অর্থ) সুরাইয়া আক্তার জানান, ‘দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৯৫ হাজার বন্দিকে পর্যায়ক্রমে বালিশ সরবরাহ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন কারাগারের বন্দিদের মাঝে মোট ১৬ হাজার ৪০০ বালিশ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি কভারযুক্ত বালিশের মূল্য পড়েছে ৪৮৬টাকা। কাশিমপুরের চারটি, নেত্রকোনা জেলা কারাগার এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বালিশ বিতরণ এ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রতিটিতে সব বন্দিকে বালিশ দেওয়া হবে।’