একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন সেখান থেকে পাওয়া গেছে তাদের সম্পদ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও নির্বাচনি ওয়াদা পূরণের বিবরণ। সম্পদ বিবরণীতে তারা জানিয়েছেন, তাদের সবারই প্রায় কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ রয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। বিগত সময়ে সংসদ সদস্য হয়ে থাকলে প্রতিশ্রুতির কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন সে তথ্য জানাতে গিয়ে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত লিখেছেন, সব ধরনের প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে তিনি ৪০-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে পেরেছেন। 
গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ: আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.কম। তার পেশা ব্যবসা। তার কৃষিখাত, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক কোনও আয় নেই। পরামর্শক ইত্যাদি থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ হাজার ১০০ টাকা জমা রয়েছে। লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ টাকার শেয়ার রয়েছে তার। ব্যবহারের স্বর্ণ রয়েছে ৪ তোলা। বিয়েতে প্রাপ্ত টিভি ফ্রিজসহ ১০ হাজার টাকার মালামাল রয়েছে। তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো ভাগ-বণ্টন করা হয়নি। তার জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার।
শেখ সুজাত মিয়া: বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি আলহাজ শেখ সুজাত মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন, যুক্তরাজ্য। তিনি পেশায় শেখ ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যা যুক্তরাজ্যের নটিংহামে অবস্থিত ক্যাটারিং ও রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান। কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৫ হাজার টাকা। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে ২ লাখ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে আরও ৪৪ হাজার ৯৬২ টাকা। গাড়ির দাম (অর্জনকালীন সময়ে মূল্যসহ) ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ২৯ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অংলকারাদির অর্জনকালীন মূল্য ৪ হাজার টাকা। আসবাবপত্র রয়েছে ছয় হাজার ৫০০ টাকার। তার অকৃষি জমির অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। দালান, আবাসিক বা বাণিজ্যিক সম্পত্তির অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি ইতোপূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে ভোটারদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে রাস্তা নির্মাণের ৬০ শতাংশ, মসজিদ-মন্দির-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ৬৫ শতাংশ, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের ৪০ শতাংশ এবং সামাজিক প্রতিশ্রুতির ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছেন।
এমপি মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু: বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তিনি নবীগঞ্জে জুহি ছিটঘরের সত্ত্বাধিকারী। তার বাৎসরিক আয় কৃষিখাতে ৪৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৬০ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে বছরে সম্মানী পেয়েছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সাথে অন্যান্য ভাতাদি পেয়েছেন ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৫০৮ টাকার। নিজের নামে তার নগদ রয়েছে ১২ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫ লাখ টাকা। ৬০ লাখ টাকা মূল্যের একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার রয়েছে তার। স্বর্ণ রয়েছে নিজের ৫ ভরি ও স্ত্রীর ১০ ভরি। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে রঙিন টিভি, ফ্রিজ ও মোবাইল সেট। রয়েছে ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে ৩ একর ও স্ত্রীর নামে ২.৩০ একর কৃষি জমি রয়েছে। অকৃষি জমি রয়েছে ২০ একর। ঢাকার পূর্বাচলে সরকারের দেওয়া ৩ কাঠার একটি প্লট রয়েছে তার। এছাড়া ২টি দালানসহ ১২ শতকের পৈত্রিক বাড়ির ৭ ভাগের ১ ভাগ তার।
ড. রেজা কিবরিয়া: গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ডি. ফিল। পেশায় অর্থনীতিবিদ। তার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, পরামর্শক ইত্যাদি থেকে ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮০ টাকা আয় হয়। তার নিজ নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে ১৭ লাখ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থানীয় আমানতে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা। গাড়ির অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর অর্জনকালীন সময়ে মূল্যে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর অর্জনকালীন সময়ের মূল ২ লাখ টাকা। আসবাবপত্রের অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ঢাকা পূর্বাচলে দশ কাঠা অকৃষি জমি রয়েছে, যার অর্জনকালীন মূল্য ৮ লাখ টাকা। ধানমণ্ডিতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির বিনিময়ে ১৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। এছাড়া পৈতৃক সূত্রে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার অর্জনকালীন মূল্য ৬০ লাখ টাকা। এ ফ্ল্যাটটি তাঁর মরহুম পিতা শাহ এএমএস কিবরিয়া জীবদ্দশায় তাঁর নামে ক্রয় করেছিলেন। অপরদিকে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যৌথ মালিকানায় তাঁর দুই বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে তিনি পাবেন ৪৩ শতাংশ। এছাড়া যৌথ দুই কক্ষের কটেজ রয়েছে। এর ৯ শতাংশের মালিক তিনি। ড. রেজা কিবরিয়ার এইচএসবিসি ব্যাংকে ত্রিশ লাখ টাকা এফডিআরের বিপরীতে ওভারড্রাফট লোন রয়েছে ২০ লাখ ১০ হাজার ৫৩৫ টাকা।
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী: হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স। পেশা রাজনীতি। কৃষিখাতে তার বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ২ হাজার ৬২২ টাকা। চাকরি থেকে পেয়েছেন ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৫ টাকা। তার নিজের কাছে নগদ রয়েছে ৭৭ লাখ ৩ হাজার ৩৭৯ টাকা। আর স্বামীর নামে রয়েছে ৪ লাখ ২৪ হাজার ২৯৯ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে নিজের নামে কিছু না থাকলেও স্বামীর নামে রয়েছে ৪২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তার নিজের ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্র্যাডো টিএক্স গাড়ি রয়েছে। স্বামীর রয়েছে ১২ লাখ টাকার যানবাহন। নিজের কাছে থাকা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্য জানা নেই তার। তবে স্বামীর ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। নিজের কৃষি জমির মূল্যও তার জানা নেই। তবে স্বামীর কৃষি জমির মূল্য ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। নিজের নামে থাকা অকৃষি জমির মূল্য ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে থাকা অকৃষি জমির মূল্য ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। হলফনামায় ইতোপূর্বে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কি না এবং হলে প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করা গেছে, এই দুইটি ঘর খালি রাখা হয়েছে।
