X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচার চলছে

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৬আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৫২

রাজবাড়ীতে বিএনপির সভাস্থলে হামলার অভিযোগ সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়েছে মাত্র দু’দিন। এরই মধ্যে নির্বাচনি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, হামলা, ভাঙচুরের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা তাদের প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে ভিত্তিতে রিপোর্টটি করা হলো।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনি গণসংযোগে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শৈলকূপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি প্রার্থী আসাদুজ্জামান অভিযোগ করেন, শেখপাড়া বাজারে এক পাশে গাড়ি রেখে অন্য পাশে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছিলেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের সমর্থকরা তার গাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে তার সমর্থক ও স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন তিনি।

খুলনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনের ১৫নং ওয়ার্ডের জংশন মোড়ে ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় হামলা ও পোস্টার ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, গোলমাল হওয়ার খবর শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কোনও পক্ষ থেকে থানায় লিখিত বা মৌখিক কোনও ধরনের অভিযোগ আসেনি।

এছাড়া ধানের শীষের পোস্টার টানানোর সময় দুই কর্মীকে মারপিট, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে পৃথক দুই লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

খুলনা-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর নগরীর মিউনিসিপ্যাল ট্রাঙ্ক রোড এলাকার ধানের শীষের কর্মী জাকির হোসেন ও রবিউল ইসলাম এলাকায় পোস্টার টানাতে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল মল্লিক নজু ও রাজু মল্লিক তাদের পোস্টার টানাতে বাধা দেয় এবং বেদম মারপিট করে। একপর্যায়ে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।

এছাড়া দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ জুয়েলের পক্ষে ভোট চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খন্দকার এ বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। যা নির্বাচনি বিধিমালার ১৮ বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি এ ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।

সিরাজগঞ্জে আ. লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শাহজাদপুরে বিএনপি প্রার্থী এম এ মুহিতের রামবাড়ীর (খঞ্জনদিয়া) বাড়িতে হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ ক’জন নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। এর আগে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এমদাদুল হক নওশাদ ও পৌর যুবদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ (৩৫) শহরের টাউন মসজিদের পাশে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হিরুর অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগের কর্মীরা মুহিতের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে যাওয়ার সময় ওই বাড়ি থেকে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। আমাদের নেতাকর্মীদের মারপিট ও দুটি হোন্ডায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানার ওসি খাজা গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিএনপি লিখিত বা মৌখিক কোনও অভিযোগ করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর ও হোন্ডায় আগুন ধরানোর ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জ -৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতার নির্বাচনি প্রচারে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিএনপির ৮/১০ সমর্থক আহত হয়েছেন।  মঙ্গলবার বিকালে সাটুরিয়ার কালুশাহ্ মাজার প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৪টার দিকে ৪/৫টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে কালুশাহ্ মাজার জিয়ারত করতে যার আফরোজা খান। ওই স্থানে আগে থেকে অবস্থান করা সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেকের নেতৃত্ব গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। মাজার জিয়ারত শেষে ফেরার পথে ৫০/৬০ জনের একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির ৮/১০ নেতা কর্মী আহত হয়।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  জানান, হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌসের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা শহরের খলিফাপট্টি এলাকায় বিএনপির নির্বাচনি সভায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সভার জন্য রাখা চেয়ার ভাঙচুর করে। মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নিজেদের জানমাল রক্ষায় বাজারের দোকান ও মার্কেট বন্ধ করেন ব্যবসায়ীরা।

রাজবাড়ী-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম জানান, খলিফা পট্টিতে মঙ্গলবার বিকালে আমার নির্বাচনি সভা ছিল। চেয়ার টেবিল সাজানোর সময় অতর্কিতভাবে সেখানে হামলা চালায়। অর্ধশতাধিক চেয়ার ভাঙচুর এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এতে ১০/১৫ জন বিএনপি কর্মী আহত হন।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল করিম জানান, বিএনপি সেখানে মঞ্চ করে সভা করবে, সেটা আমাদের জানা ছিল না। যখন তারা সভার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন উচ্ছঙ্খৃল কিছু লোকজন হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নরসিংদী প্রতিনিধি জানিয়েছে, নরসিংদী-২ (পলাশ ও সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রদল ও যুবদলে ১০ নেতাকর্মী আহতসহ ১০ মোটর সাইকেল ভাঙচুর এবং চারটি মোটরসাইকেল লুট করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আওয়ামী লীগের দু’টি নির্বাচনি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার বিকালে আমদিয়া ইউনিয়নের বেলাব বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন মঈন খান। বিকাল ৪টার দিকে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে সংসদীয় আসনের আমদিয়া ইউনিয়নের বেলাব বাজার এলাকা পথসভা করতে গেলে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাও মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী গাড়িবহরে হামলা চালায়।

এ ব্যাপারে জানতে ছাও মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে আমদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ ইবনে রহিদ মিঠু বলেন, মঈন খান নরসিংদী থেকে তার সন্ত্রাসী লোকবল নিয়ে এসে বেলাব বাজারে আওয়ামী লীগের দুটি নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তাদের গাড়িবহরে হামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার। 

পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস আই) ইউসুফ মিয়া বলেন, মেহেরপাড়ায় বিএনপির লোকজন মিছিল বের করা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আমদিয়ার বেলাব বাজারের ঘটনাটি আমার জানা নেই।

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা