X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী মুক্ত দিবস

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৯আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৭

নীলফামারি মুক্ত দিবসের স্মৃতিসম্ভ

১৩ ডিসেম্বর তৎকালীন নীলফামারী মহকুমায় ৭১ জন মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছিল।

১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও বীর বাঙালিরা নীলফামারী শহরকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন। এদিন, জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে উত্তোলন করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

জেলার ৬ (ছয়) থানা নিয়ে নীলফামারী ছিল একটি মহকুমা শহর। এ শহরের হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরহ মানুষ দেশকে হানাদার মুক্ত করতে অকাতরে প্রাণ দিয়ে ছিল। সেদিন দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করতে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়ে ছিলেন। এসময় শহীদ হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন নোকও।

এছাড়াও শহীদ ক্যাপ্টেন বাসার (সদর), শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন (সদর) শহীদ আহমেদুল হক প্রধান (ডোমার) শহীদ মোজাম্মেল হক (ডোমার), শহীদ জাহেরুল ইসলাম চিলাহটি (ডোমার), শহীদ আঞ্জারুল হক ধীরাজ চিকন মাটি (ডোমার), শহীদ মিজানুর রহমান চিকন মাটি (ডোমার)। নীলফারিতে আরও শহীদ হয়েছেন বাবু সুভাষ সিংহ (ডিমলা), শহীদ সামসুল কিবরিয়া খগাখড়িবাড়ী (ডিমলা), শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ রায় পূর্ব বালাগ্রাম (জলঢাকা), শহীদ আমজাদ মিস্ত্রী চাঁদখানা (কিশোরগঞ্জ) শহীদ আব্দুর রশিদ মাগুড়া (কিশোরগঞ্জ),শহীদ আব্দুল বারেক মাগুড়া ( কিশোরগঞ্জ), শহীদ শাহবুদ্দিন সিট রাজিব ( কিশোরগঞ্জ), শহীদ আব্দুল মজিদ কাশিরাম বেলপুকুর ( সৈয়দপুর), শহীদ জয়নাল আবেদীন বোতলাগাড়ী (সৈয়দপুর), শহীদ মির্জা হাবিবুর রহমান বেগ ঘুঘুমারী (জলঢাকা)। বাকিদের এখনো নাম জানা যায়নি।

চারিদিক থেকে  গ্রাম, গঞ্জ ও শহরের মানুষ ঘিরে ফেলে রাজাকার আল-বদর আল-সামস ও তাদের দোসরসহ পাক সেনাদের। পরে তারা পালিয়ে গিয়ে সৈয়দপুর সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐতিাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে সাড়া দিয়ে নীলফামারীর অগণিত ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ৬নং সেক্টরের সঙ্গে ‍যুক্ত হয়। পরে তারা পাকসেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণ চালায় এবং তাদের একে একে পরাজিত করে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার মো. ফজলুল হক বলেন, ‘নীলফামারীর ৬নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিল খাদেমুল বাশার। তার নেতৃত্বে নীলফামারী শহর ১২ ডিসেম্বর রাতে শত্রু মুক্ত হতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন,‘নয় মাস শত্রু সেনার দল নিরস্ত্র বাঙালি নিধনে মেতে উঠেছিল।’

যুদ্ধ ক্ষেত্রে (রণাঙ্গন)অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় ও অনেকেই শহীদ হন। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের ফলে ১২ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী নীলফামারী শহর ছেড়ে আশ্রয় নেয় সৈয়দপুর সেনানিবাসে। এসময় নীলফামারি থেকে পালিয়ে যায় রাজাকার, আলবদর, সামস ও তাদের দোসররা।

১৩ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে জেলা শহরে প্রবেশ করলে তাদের দেখে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষের ঢল। এসময় স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড়ে বাসের খুঁটিতে প্রথম উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী শহর হানাদার মুক্ত হয়। এই দিনে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হলে বিজয়ের উল্লাসে (ফেটে পড়ে) মেতে উঠে মুক্তিকামী সব শ্রেণী পেশার মানুষ। ‘জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে তৎকালীন নীলফামারী মহকুমা শহর। নয় মাসের গেরিলা আক্রমণ আর সম্মুখ যুদ্ধে জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ উপজেলা মুক্ত করে তাঁরা এগিয়ে আসেন নীরফামারী শহরের দিকে। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার মুক্ত হয় নীলফামারী।

দিনটিকে স্মরণ করতে ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উপজেলা ইউনিট হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচি।

কর্মসূচির মধ্যে সকাল দশটায় জাতীর জনকের প্রতিকৃত্বিতে পূস্পমাল্য অর্পণ ও সাড়ে দশটায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধের গান ও নাটক পরিবেশিত হবে। 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা