সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বৌলাই ও আবুয়া নদীতে নাব্য সঙ্কটের কারণে চার শতাধিক বালু ও পাথর বোঝাই নৌকা ১৫ দিন ধরে আটকা পড়ে আছে। এর ফলে বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। এছাড়া এসব নৌযানের দু’হাজার শ্রমিকও দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বৌলাই ও আবুয়া নদীর হিজলা, মাহমুদপুর, পৈন্ডুপ, মদনাকান্দি, দুর্গাপুর, হাওরিয়া, আলীপুর, বদরপুর ও বেহেলীসহ দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাল্কহেড, স্টিলবডি, বারকি, যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌযান আটকা পড়ে আছে।
এ কারণে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ, তবে সড়ক পথ সচল রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ,দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বৌলাই নদী ও আবুয়া নদীতে বছরের এসময় নাব্য সংকট দেখা দেয়। গুরুত্বপূর্ণ এ নদী দিয়ে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফাজিলপুর বালুপাথর মহাল থেকে বালু পাথর উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।
সুনামগঞ্জের বালু-পাথর ব্যবসায়ী শামীম আহমদ জানান, বৌলাই ও আবুয়া নদীতে বছরের এ সময় পানি ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। এছাড়া নৌযান চলাচলে কোনও শৃঙ্খলা না থাকায় প্রতিবছর ব্যবসায়ী ও নৌযান মালিকদের এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নদী খননের দাবি জানালেও কোনও কাজ হচ্ছে না।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের নৌযান শ্রমিক হোসেন আহমদ বলেন,‘জেলার অন্যান্য জায়গায় নদী খননের কাজ চলছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটটি খননের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে শ্রমিকরা বাল্কহেড নৌকা নিয়ে ১৫/২০ দিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের নৌযান শ্রমিক নূর মিয়া বলেন,‘নৌকা নদীর তীরে লাগিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বসে আছি। এখানেই থাকা খাওয়ার কাজ সারতে হচ্ছে। একদিকে ট্রিপ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সময়। এতে লোকসানের মুখে পড়ছে ব্যবসায়ী ও বালু শ্রমিকরা।’
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর নৌ পরিবহন সমিতির সদস্য মো.আব্দুল হান্নান বলেন,‘বাজিতপুর থেকে এখানে শতাধিক বাল্কহেড নৌকা বালু কিনতে এসেছিল। সেগুলোর বেশিরভাগই ২০ দিন ধরে নদীতে আটকা পড়ে আছে। ফলে ঠিকাদারদের বালু সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাদের নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে।’
সমিতির অপর এক সদস্য মুন্না মিয়া বলেন,‘নৌযানগুলো দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়ে থাকায় সমিতির পক্ষ থেকে এখানে পরিদর্শন করতে এসেছি। এখানকার বালু উন্নতমানের তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ কাজের জন্য এই বালু ব্যবহার করা হয়। এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু কিনতে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন।
জামালগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের বালি ও পাথর ব্যবসায়ী মিয়া হোসেন বলেন,‘বর্ষাকালে নদীর গভীরতা ঠিক থাকলেও শীতে গভীরতা ও প্রস্থ অনেক কমে যায়। তাই শীতে এ নদী দিয়ে ভারী নৌযান চলাচল করতে পরে না। এ কারণে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।’
স্থানীয় নৌযান শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান নদী খনন করা না হলে দেশের বালি পাথর পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তারা দ্রুত বৌলাই ও আবুয়া নদী খননের দাবি জানান।
জামালগঞ্জ উপজেলার ১ নং বেহেলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম চন্দ্র তালুকদার বলেন,‘দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না করায় নাব্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন নদী খনন করা জরুরি।’
লালপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান বলেন,‘নাব্য সংকটের কারণে ও নদী সরু হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নৌপুলিশ নৌজট নিরসনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু গভীরতা কম হওয়ার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
জামালগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা নিহারঞ্জন দাস বলেন,‘বৌলাই নদী খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এবার নাব্য সংকটের কারণে ড্রেজার নদীতে আনা যাচ্ছে না। তাই আগামীতে নদী খনন করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
উল্লেখ্য,সুরমা নদীর শাখা নদী বৌলাই ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর বেশিরভাগ অংশেই নাব্য হ্রাস পেয়েছে।