X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রোলবোমা হামলার ৫ বছর: বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৭আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:০৩


মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রোলবোমা হামলা রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় শিশুসহ ছয় জন নিহত হওয়ার পাঁচ বছর হয়ে গেলো। ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই হামলায় দগ্ধ হন অন্তত ২৫ যাত্রী। তবে পাঁচ বছর পরও শেষ হয়নি ওই মামলার বিচার। আইনি মারপ্যাঁচে বন্ধ রয়েছে মামলার সব কার্যক্রম। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাধীনভাবে। ১৩২ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬১ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতারই করতে পারেনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম বড় সহিংস ঘটনা ঘটে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন এলাকায়। কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে ছেড়ে আসা খলিল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুরের বাতাসন এলাকায় আসলে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা চলন্ত বাসে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। বাসের ভেতরে থাকা শিশুসহ ৬ যাত্রী জীবন্ত দগ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অন্তত ২৫ বাসযাত্রী। আহতদের অনেকেই চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। বাসযাত্রীদের বেশির ভাগই সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র বলে জানায় পুলিশ।

এ ঘটনায় এসআই আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় ৮৭ জন জামায়াত শিবির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মিঠাপুকুর থানায় সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম ১৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির বিচার রংপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালত-১ এ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার অ্যাডভোকেট জানান, মামলায় ডাক্তার, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ছয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি তদন্তে ত্রুটির সুযোগ নিয়ে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আবেদন করলে মামলাটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার জানান, আসামিপক্ষ হাইকোর্টে মামলাটি কোয়াশম্যান্ট (আদালতের ক্ষমতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনও মামলার মাধ্যমে আসামিকে হাজতে দেওয়া) করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র আইনজীবী জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নিলে আসামিপক্ষে মামলা কোয়াশম্যান্টের আবেদন খারিজ হয়ে যেত। কিন্তু কেন তারা উদ্যোগ নিচ্ছে না সে ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রোলবোমা হামলা

অপরদিকে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী প্রধান আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল মালেক অ্যাডভোকেট জানান, ‘চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি পুলিশ বাদী হয়ে ৮৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মিঠাপুকুর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীকালে তদন্তকালে ওই ৮৭ জন আসামিসহ ১৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, ‘মামলাটির তদন্তে ক্রটি থাকায় এ সুযোগ নিয়েছে আসামি পক্ষ। তারা হাইকোর্টে মামলাটি খারিজ করার আবেদন করায় আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম এখন পুরোপুরি স্থগিত রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’

এদিকে মামলা পরিচালনার সঙ্গে থাকা সরকারপক্ষের একাধিক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পুলিশ নিজেরা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। এজাহারে অনেক ক্রটি আছে। একইভাবে চার্জশিটেও অনেক সমস্যা আছে। পুলিশ জোড়াতালি দিয়ে মামলার এজাহার আর চার্জশিট দিয়েছে। তদন্তজনিত ক্রটি রয়েছে মামলাটিতে। শুধু তাই নয়, এই মামলার বিচার শুরু হওয়ার পর মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ১০ আসামির নামই বলতে পারেননি। অথচ মামলার এজাহার দায়ের করার সময় তিনি ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করেই মামলা দায়ের করেছিলেন। আইনজীবীরা আরও বলেন, মামলার যিনি চার্জশিট দাখিল করেছেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা তৎকালিন মিঠাপুকুর থানার ওসি তদন্ত নজরুল ইসলাম ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করলেও কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে আদালতে দাখিল করেছেন। কেন ৮৭ জনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে তিনি চার্জশিট দাখিল করলেন তার কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ তিনি উল্লেখ করেননি। এই মামলা নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তে অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগে কোনও ত্রুটি নেই। তদন্তের সময় ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও মিথ্যা।’

এদিকে মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন অ্যাডভোকেট জানান, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে ছয় যাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করার পরেও মামলাটির যদি বিচার না হয় আইনের মারপ্যাঁচে আটকে যায় তাহলে এ দায় কার? দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করে দোষিদের সাজা দেওয়া না হলে আরও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটাতে পারে দুষ্কৃতকারীরা।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল বলেন, ‘এই মামলায় আসামিদের বিচার না হলে এবং কঠোর শাস্তি না হলে এর দায়ভার কে নেবে? দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করার দাবি জানাই।’

 

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না