X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

লেবু চাষে ভাগ্য বদল ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কৃষকদের

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর
১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:০০আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৬





লেবু ক্ষেতে কৃষক বর্ষা মৌসুমে বন্যার কষাঘাতে নাজুন অবস্থার সৃষ্টি হয় শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মানুষের জীবন। ঘরবাড়ি আর ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয় তাদের। তবে এসব মানুষের বাঁচার নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে লেবু চাষ। লেবু গাছ বৃষ্টি সহনীয় ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। শেরপুর চরাঞ্চলের দিগন্ত জুড়ে শুধু লেবুর বাগান আর বাগান। লেবুর গন্ধে মোহিত থাকে এলাকা। সরেজমিন ঘুরে ও লেবু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শেরপুর-জামালপুর হাইওয়ে থেকে নেমে গ্রামের মেঠো পথ ধরে ডানে বামে যেদিকেই তাকানো যায় শুধু লেবুর বাগান। সদর উপজেলার বলায়ের চরের ধোপার চর, চরশ্রীপুর, রামেরচর, চরসাহাব্দি, জঙ্গলদি, ঘুঘরাকান্দি, চরপক্ষিমারির সাতপাকিয়া, কুলুরচর, চরশেরপুর, রৌহা ও কামারিয়ার অন্তত ২০ গ্রামের কয়েকশ’ একর জমিতে করা হয়েছে লেবুর চাষ। গ্রামগুলোতে ঢুকলে বাতাসে লেবুর গন্ধ বিমোহিত করে সবাইকে। সবুজ গাছের কাঁচাপাকা লেবুর এ যেন এক অভয়ারণ্য।

প্রান্তিক চাষিরা প্রায় প্রতিদিন গাছ থেকে লেবু তুলে বিক্রি করেন। তবে বড় চাষিরা ১৫ দিন অন্তর লেবু তুলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এখন প্রতি হাজার লেবুর দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

লেবু চাষিরা জানান, ১০-১২ বছর আগে ২-৩টি বাগানের মাধ্যমে এই চাষের সূচনা হয়। টাঙ্গাইলের জাফর (জাফরের নাম অনুসারে জাফরি লেবু ) নামে এক লেবু চাষির কাছ থেকে শেরপুরে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত চরাঞ্চলের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান লেবু চাষ প্রথম শুরু করেন। এক একর জমিতে লেবু চাষ করতে আড়াই বছর পর্যন্ত দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাগে। প্রতিবছর পরিচর্যাসহ আরও খরচ পড়ে ৫০ হাজার টাকা। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হয় আড়াই বছর পর। বছরে ওই এক একর জমি থেকে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেবু আসে। আড়াই বছর পর থেকে ১২ বছরে ওই এক একর জমিতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আর আয় আসে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা।

লেবু চাষকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি এক সময়ের অভাবি চরবাসীর ছেলেমেয়েরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগও পাচ্ছে। বলায়ের চর গ্রামের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব রানা জানান, পড়ার ফাঁকে নিজেদের লেবু বাগানে কাজ করে সে। গ্রামে লেবুর বাগান থেকে অর্থ আসার ফলে কেউ আর না খেয়ে থাকে না। যাদের বাগান করার জমি নেই তারা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে আয় করছে। মোটামুটি এক একরের একটি বাগান কোনও রকম দুই বছর ধরে রাখতে পারলেই পরবর্তী ১০ বছর খুব সামান্য খরচ করেই প্রতিদিন কিছু না কিছু আয় করা যায়। লেবু উৎপাদনকে ঘিরে এখানে শ্রমের দামও বেড়েছে। বিশেষ করে শত শত নারী শ্রমিক কাজ পেয়ে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে পারছেন।

লেবু চাষিরা জানান, চরাঞ্চলের বালু মাটি লেবু চাষের জন্য উপযুক্ত। এখানে মূলধন ও শ্রম দিতে হয় কম। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থান বলে বন্যা তাদের চির সাথী। গাছের নিচে ১০-১২ দিন পানি জমে থাকলেও কোনও ক্ষতি হয় না। আর লেবু চাষ সাধারণত জৈব সার দিয়েই হয়ে থাকে, রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না, পরিশ্রমও কম। তাই এই লেবু চাষে সবার ঝোঁক।

৪০ একর বাগানের মালিক লেবু চাষি মনিরুজ্জামান জানান, চরাঞ্চলের মানুষের কম ঝুঁকিতে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসলের দরকার ছিল। এখন এলাকার কেউ আর বেকার নেই।

৩০ একর লেবু বাগানের মালিক নূর হোসেন জানান, এখানে লেবুর বিপ্লব হয়েছে। লেবু চরাঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। লেবুই এখন মানুষের ভরসা।

চাষিদের দাবি, যতই চাষ বাড়ছে ততই লেবুর দাম কমছে। লেবু সংশ্লিষ্ট শিল্প যেমন সাইট্রিক অ্যাসিড, লেবুর তেল, লেবুর জুস, লেমন গ্রাস (সাবানের কাঁচামাল), স্কোয়াস জেলি উৎপাদন করে বাজারজাতকরণ করতে পারলে আগামী দিনে লেবুর উৎপাদন ও কৃষকের লাভ বাড়বে। এ বিষয়ে সরকার বা এনজিওদের হাত বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন লেবু চাষিরা।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপরিচালক ড. আশরাফ উদ্দিন জানান, লেবু চাষে এ অঞ্চলের জমি খুবই উপযোগী। চরাঞ্চলে লেবু বিচিবিহীন রসালো, স্বাধ, গন্ধ ও ভিটামিনে ভরপুর।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা