উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে আগামী যেকোনও নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলটির জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে একথা জানা গেছে।
জেলা বিএনপির নীতিনির্ধারক পার্যায়ের এক নেতা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আশঙ্কা অমূলক ছিল না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রমাণ হয়ে গেছে এ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং এ অবস্থায় বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনও নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী।’
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক কুড়িগ্রামের বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তার অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অধীনে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় তা জাতির কাছে প্রমাণিত। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং এই সরকারের অধীনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা বিএনপির জন্য বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না।’
তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে দলের কর্মী হিসেবে তা পালন করবেন বলে জানান এ নেতা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে অনাগ্রহের কথা জানিয়ে বিএনপির উলিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপির প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া হবে। এমন আশঙ্কা থেকে আমার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা আমাকে নির্বাচনে যেতে নিষেধ করছেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক নই। তবে হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটার অপেক্ষায় রয়েছি।’
জেলা ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, ‘এ সরকার যে প্রহসনের নির্বাচন উপহার দিয়েছে তাতে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। এ ধরনের প্রতারণামূলক নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনও সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর চেয়ে বরং দল গুছিয়ে সংগঠনকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে করে আগামীতে সরকারের যেকোনও জনস্বার্থ বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করা সহজ হবে।’
জেলা বিএনপি ও জেলা যুবদলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীরা যে উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছে নির্বাচনের ফলাফলে সেই উৎসাহ উদ্দীপনা তলানীনিতে পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় আগামীতে কোনও পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক সদস্য জানান, নির্বাচনে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেয়। যার প্রমাণ জাতীয় নির্বাচন। এমতাবস্থায় দলের কেন্দ্রীয় কমান্ড যদি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা হবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিঃস্ব করার সিদ্ধান্ত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম -১ আসন (নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা) থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি। দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না তা প্রমাণ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে দলীয় আচরণ করেছে তাতে করে তৃণমূল নেতাকর্মী এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। তবে এরপরও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হলে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।’