X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলকপির কেজি ২ টাকা!

বগুড়া প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:২৮আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৩




বগুড়ার মহাস্থান হাটে বিক্রির জন্য আনা ফুলকপি এবার বগুড়ায় রবিশস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তেমন লাভবান হচ্ছেন না। নামমাত্র মূল্যে তারা নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করলেও ভোক্তারা সেই পণ্য কয়েকগুণ বেশি দামে ক্রয় করছেন। এতে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয় গোষ্ঠীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষক প্রতি কেজি ফুলকপি দুই টাকায় বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। আর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজিতে প্রতি মণে দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাম্পার ফলনের কারণে দাম কমে গেছে। তবে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে সবজি বিক্রি করায় তেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বগুড়ার সর্ববৃহৎ সবজির হাট মহাস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ফুলকপি কিনছেন ৮০ টাকা মণ দরে। অর্থাৎ এক কেজি ফুলকপির দাম মাত্র দুই টাকা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৩-৪ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে একই ফুলকপি কিনতে হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি পিস পাতাকপি ৩-৪ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৪-৫ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়।

ফাটাপাকড়ি আলু মণপ্রতি কৃষক বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৬০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া সাদা আলু (ডায়মন্ড) প্রতি মণ কৃষক বিক্রি করছেন ৩৬০ টাকা আর ব্যবসায়ীরা ৪৮০ টাকায়। কৃষকরা সাদা আলু (গ্র্যান্ড) প্রতি মণ বিক্রি করছে ২৫০ টাকায় আর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৩২০ টাকায়। শিম ৫ টাকা কেজি কিনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বেগুন ছিল ১০ টাকা। এখন কৃষক বিক্রি করছেন ৫-৬ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৪-১৫ টাকায়। প্রতি কেজি মুলা ৩ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৫-৬ টাকায়।

কৃষকরা প্রতি পিস লাউ বিক্রি করছেন ১৫-২০ টাকায়। সেটা কিনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ২৪-২৫ টাকায়। ৩-৪ কেজির মিষ্টি লাউ ৪০ টাকা পিস কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকায়। ১২ টাকা কেজির গাজর এখন ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ১২-১৪ টাকায়। গত সপ্তাহে এক কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। এখন কৃষকের কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪ টাকায়। ২০ টাকা কেজির খিরা এখন কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২০ টাকায়। অন্যান্য কাঁচা শাকসবজির একই অবস্থা।

মহাস্থান হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া ও মেহেদী হাসান জানান, বুধবার ও শনিবার হাট ছাড়াও প্রতিদিনই কাঁচামাল বিক্রি হয়। প্রতি রাতে ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক (প্রতি ট্রাক ১২-১৪ টন) কাঁচামাল নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে যায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে (৪০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম কমে গেছে। তবে শহর ও আশপাশের বাজারগুলোতে কয়েকগুণ বেশি দামে তা ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সবজির দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা অধিক দরে বীজ ও সার কিনে এবং সেচ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না। মাল বিক্রি করতে এসে তাদের কাছে অনেক কৃষক কান্নাকাটি করে থাকেন।

মহাস্থান হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক কাজল মিয়া, মোকামতলার শহিদুল ইসলাম ও রামচন্দ্রপুরের বিশ্বনাথ জানান, সবজির দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ফুলকপি ২ টাকা কেজি, পাতাকপি ৩-৪ টাকা পিস বিক্রি করেছেন। এতে তাদের ভ্যান ভাড়াও উঠছে না। অথচ মধ্যস্বত্বভোগী ও খুচরা বিক্রেতারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। দুই টাকা কেজির ফুলকপি শহরে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে খুচরা বিক্রেতা বগুড়া শহরের নামাজগড় বাজারের আবদুল বারী, ফুলবাড়ি বাজারে রশিদুল ইসলাম, কালিতলা বাজারের মোকাম্মেল জানান, মহাস্থান হাট থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। এছাড়া হাটে বেশি খাজনা দিতে হয় বলে তাদের পণ্যের মূল্যও বেড়ে যায়।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, সবজির ভালো ফলন ও আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, গত ১৫ অক্টোবর শুরু হওয়া রবি মৌসুম ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ মৌসুমে ১২ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্র ধার্য হয়েছিল। সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত ফলন উঠেছে এক লাখ ৬০ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন।

তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, সার ও কীটনাশকসহ কৃষি সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং কৃষি বিভাগের তৎপরতার কারণে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কারণে শাকসবজির দাম কম।

তিনি দাবি করেন, বর্তমানে বাজার দর কম হলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। কারণ, শুরুতে তারা অনেক বেশি দামে এসব সবজি বিক্রি করেছেন। এখন তারা বোনাস আয় করছেন।

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!