বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নের সড়ক পাকা করার কাজে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই রাস্তা নির্মাণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে রাস্তার কাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারসহ নানা অনিয়মেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নের উদালবনিয়া-ঝংকা রাজবিলা সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতাভুক্ত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পেয়েছে এলজিইডি’র তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটি জেলার লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজবিলা-উদালবনিয়া সড়কের পাশের রাবার ড্যাম সংলগ্ন জমির ওপর দিয়ে উদাল বনিয়া ঝংকা রাজবিলা সড়কটির নির্মাণ কাজ চলছে। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ যেনতেনভাবে সম্পন্ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজ। তারা রাস্তা থেকে পুরাতন ইটের সলিং তুলে সেগুলো ভেঙেই খোয়া হিসেবে ব্যবহার করছে। আর রাস্তার নির্মাণ কাজে বালু ব্যবহার না করে সড়কের পাশের একটি মাদ্রাসার জায়গা থেকে অবৈধভাবে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে পাহাড়ের বালি মিশ্রিত লাল মাটি ব্যবহার করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা অংক্য ও মংজিক মারমা বলেন, ‘এলাকায় ভালো বালু থাকার পরও কেন পাহাড় কেটে লাল মাটি ব্যবহার করছে, তা আমরা জানি না। খোয়ার ওপর পাহাড়ি মাটি ঢালার পর যখন পানি দেওয়া হয় তখন পুরো রাস্তায় কাদা হয়ে যায়। তাই এভাবে বানানো রাস্তাটি টেকসই হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। কাজ চলমান অবস্থায় সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের একজন কার্যসহকারী নিয়মিত দেখাশোনার দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়াও যায় না।’
রাস্তাটিতে বালুর বদলে পাহাড়ি মাটি ব্যবহার হচ্ছে কেন জানতে চাইলে নির্মাণ কাজের মাঝি (ঠিকাদারের তত্ত্বাবধায়ক) মো. তুহিন দাবি করেন,‘পাহাড়ের লাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।এটি স্থানীয় ঝংকার বালুর চেয়েও দানায় বড় ও সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যবহার উপযোগী। আমরা প্রথমে ঝংকার বালু ব্যবহার করেছিলাম,পরে অফিস (এলজিইডি)থেকে বালুর পরিবর্তে লাল বালু (পাহাড়ের মাটি) ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাই আমরা মাদ্রাসায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে পাহাড় কেটে লাল বালু সংগ্রহ করছি।’
প্রসঙ্গত: পরিবেশ আইনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটা নিষেধ। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার শাস্তি হিসেবে দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করার শাস্তি ১০ বছরের জেল বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু, পরিবেশ আইন অমান্য করেই পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,বান্দরবানে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর জন্য কোনও অনুমোদন চট্টগ্রাম থেকে নেওয়া হয়নি।
রাঙ্গামাটি জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার পুতুল বলেন, ‘অফিসের (এলজিইডি) অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই এ বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড়ের এ লাল বালু ব্যবহার করলে রাস্তার কোনও ক্ষতি হবে না।’
১ নম্বর রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যঅং প্রু মারমা বলেন,‘‘আমি এলাকা পরিদর্শন করে এর সত্যতা পেয়েছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানোর পর তারা জানান, ‘এটি ব্যবহারে কোনও অসুবিধা নাই।’’
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব বলেন, ‘সহকারী প্রকৌশলী কয়েকদিন আগে সড়কে ব্যবহৃত লাল বালু টেস্টের জন্য নিয়ে এসেছিল। আমরা পরীক্ষা করে দেখছি এ লাল বালু দিয়ে কোনও আরসিসি বা সিসি কাজে ব্যবহার করা না গেলেও সড়ক পাকা করার কাজে ব্যবহার করা যাবে।’
পাহাড়ের মাটি রাস্তা বানানোর কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হুসাইন মোহাম্মদ সায়েম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাহাড়ি মাটি বা লাল মাটির প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাই যদি এই মাটিতে বালুর গুণগত পরিমাণ ঠিক থাকে তাহলে এ মাটি ব্যবহার করা যাবে। তবে একেবারেই বালু ব্যবহার না করলে এর ওপরে যে কার্পেটিং করা হবে সেটি এই মাটি ধরে রাখবে না। মাঝখানের স্তরে এই মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ওপরের স্তরে অবশ্যই বালু ব্যবহার করতেই হবে। নাহলে বর্ষাকালে এই মাটি কাদায় পরিণত হবে আবার শীতকালে শুকিয়ে গেলে রাস্তায় ফাটল দেখা দেবে।রাস্তার ওপরে যে পিচ ঢালা হয় তা টিকিয়ে রাখতেই এর নিচে বালুর স্তর থাকতেই হবে। তবে যে পাহাড়ি মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা বৈধভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। কারণ,অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার কোনও নিয়ম নেই।এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তিও হতে পারে।