X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছরেও সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার হয়নি

আমিনুল ইসলাম খান রানা, সিরাজগঞ্জ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৪আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৯

সাংবাদিকদের শোক র‌্যালি দুই বছরেও সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জও গঠন হয়নি। শাহজাদপুর আমলী আদালত থেকে মামলাটি দেড় বছর আগে স্থানীয় জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে গেলেও মামলার সব আসামি সময়মত হাজির না হওয়ায় অভিযোগ গঠনের শুনানি বার বার পিছিয়েছে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে বিচার সম্পন্ন করার গণমাধ্যমকর্মীদের দাবিটিও এখনও পূরণ হয়নি। শিমুল দৈনিক সমকাল’র শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন।

অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শামসুল হক বলেন, ‘শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরু হাজতে রয়েছেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে বিগত তারিখে আদালতে হাজির করতে পারেননি। সেজন্য চার্জ গঠনের শুনানিই হয়নি। আদালতে চার্জশিটভুক্ত আসামি উপস্থিত না থাকলে সাধারণত চার্জ গঠন করা হয় না। যে কারণে এ প্রক্রিয়া বার বার পিছিয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিনকে সামনে রেখে আসামি হালিমুল হক মিরুকে আদালতে হাজির করার জন্য ইতোমধ্যে কারাগারে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ)  পাঠানো হয়েছে।’  

জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আল মামুন বলেন, ‘গত ৩-৪ দিন আগে আমরা প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) হাতে পেয়েছি।’

শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন,  ‘আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে প্রক্যাশে ঘুরে বেড়ানোর কারণে ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সবসময় উৎকণ্ঠায় থাকি। মিরু জেলে থাকলেও তার দু’সহোদরসহ এ মামলার বাকি ৩৭ জন আসামি মিরুর জামিনের জন্য সর্বদা উঠেপড়ে লেগেছে। মিরু জামিনে বের হয়ে এলে হয়তো আমরা আর বিচারই পাবো না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য মহামান্য উচ্চ আদালতের রায়ে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। সেটি আগামীতে বাস্তবায়িত এবং খুনিরা শাস্তিপ্রাপ্ত হলে সরকারের কাছে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকবো।’

শাহজাদপুর পৌরসভার একটি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে দ্বন্দ্বে মিরুর দুই সহোদর মিন্টু ও পিন্টুসহ তাদের অনুসারীরা ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে ধরে এনে পৌর এলাকায় মিরুর বাড়িতে আটকে রাখে। তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে মিরুর বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় মিরুর সহোদরদের উভয় পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। ওই সংঘর্ষ চলাকালে মিরু নিজেও শর্টগান হাতে নিয়ে মহড়া দেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক শিমুল মিরুর ছোড়া শর্টগানের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরতর আহত হন। যা সংঘর্ষের সময় স্থানীয় লোকজনের ধারণ করা ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

শিমুলের স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মেয়র হালিমুল হক মিরু, তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০/২২ জনকে আসামি করা হয়। মোট ৪০ জনকে আসামি করে তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২ মে শাহজাদপুর আমলী আদালতে অভিযোগ জমা দেয় পুলিশ।

মামলার দু’দিন পর ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন মিরু। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মেয়র পদ এবং কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে মিরুকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তদন্ত শেষে খুনের ঘটনার ৩ মাস পর আদালতে ৩৮ জনের নামে চার্জশিট দেয় পুলিশ। শাহজাদপুর আমলী আদালত থেকে জেলা জজ আদালত এবং পরে অতিরিক্ত জেলা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে স্থানান্তর হয় মামলাটি।

হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন মাস পরই পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। এরপর প্রয়াত শিমুলের স্বজন এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়। প্রায় এক বছর আগে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সুপারিশসহ নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। রহস্যজনক সে প্রক্রিয়াটিও এখনও ঝুলে আছে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আগে প্রারম্ভিক পদক্ষেপ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের গেজেট নোটিফিকেশনও হয়নি।

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে মিরুর জামিন হলে নতুন করে উৎকণ্ঠায় পড়েন শিমুলের স্বজনরা। পরবর্তীতে শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহার বেগমের আবেদেনের প্রেক্ষিতে মহামান্য সুপ্রিম আদালতের আপিল বিভাগ গত ১২ নভেম্বর তা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া ৬ মাসের মধ্যে চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করার জন্যও আদেশে বলা হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আদিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিমুলের খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ফের দাবি করছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ শিমুলের সহকর্মী ও স্ত্রী-স্বজনরা। 

শাহজাদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুন্ডু বলেন, ‘মিরু ও তার দোসরদের বাঁচাতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর তদবিরে প্রভাবশালী একটি মহল শুরু থেকেই নানা ফন্দি-ফিঁকির করে আসছেন। আর ওই মহল স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়েও বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে মামলার বিচারিক কার্যক্রমের গতি থমকে দিতেও নানা পাঁয়তারা করছে বলে শহাজাদপুরে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে।’

শিমুল হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে র‌্যালি ও স্মরণ সভা  

রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় শাহজাদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালোব্যাচ ধারণ করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রেসক্লাব চত্বরে শিমুলের প্রতিকৃতিত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে শোক র‌্যালি বের করা হয়। সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ শহীদ স্মৃতি সন্মেলন কক্ষে শিমুলের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। শিমুলের রুহের মাগফেরাত কামনায় বাদ যহর শাহজাদপুর মখ্দুমিয়া জামে মসজিদ, টাউন সমজিদ ও মাদলা জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল করা হয়।তার আগে মাদলা গ্রামে শিমুলের কবর জিয়ারত করেন সহকর্মীরা।

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে