আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘সেফহোম’ থেকে শীর্ষ ইয়াবাকারবারিদের কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে আনা হয়েছে। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের মঞ্চের কাছে দোতলা ভবনে তাদের রাখা হয়। আত্মসমর্পণকারীদের দেখতে হাজারও মানুষ ভিড় করছেন মঞ্চের কাছে। এদিকে তালিকাভুক্ত কয়েকজন ইয়াবা কারবারিকেও অনুষ্ঠানস্থলে দর্শক হিসেবে কাছে দেখা গেছে।
পৌনে ১১টায় আত্মসমর্পণ অনুষ্টানে উপস্থিত হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলার তিন সংসদ সদস্যও রয়েছেন সেখানে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে তিনটি বাসে করে ‘সেফহোম’ থেকে টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে আনা হয় ইয়াবা কারবারিদের। অনুষ্ঠানে তাদের অনেকের স্বজনরাও ভিড় করেছেন। এই মঞ্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকীভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট ও অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে প্রায় উখিয়া-টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার। আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা হবে জানা গেছে।
এদের মধ্যে রয়েছে টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল আমিন, আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল। রয়েছে টেকনাফ সদরের এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নূরল বশর নুরশাদ, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুছ, ছৈয়দ আহমদ, রেজাউল করিম, নুরুল হুদা মেম্বার, দিদার মিয়া, জামাল হোসেন মেম্বার, মোহাম্মদ শামসুসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার বলেন, ‘এই আত্মসমর্পণ অনুষ্টানের মাধ্যমে টেকনাফ ইয়াবামুক্ত হবে। এটি আমাদের জন্য সুখবর বনে আনবে।’ তিনি সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘আত্মসর্পনের জন্য ইয়াবাকারবারীদের পাইলট বিদ্যালয়ের স্কুলে ভেতরে রাখা হয়েছে। তাদের মঞ্চে আনা হবে। তারপর পুরো প্রক্রিয়াটি শুরু হবে।’
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানিকভাবে ভালো উদ্যোগ। এতে করে ইয়াবা কমে আসবে। তবে এখনও যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণের আওতায় আসেনি, তাদের গ্রফতারের করা হবে।’
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। ভয়াবহ মাদক ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এ পর্যন্ত সীমান্তে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছে ৪২ কারবারি। এর মধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে চারজন 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন-
আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন যে ইয়াবা কারবারিরা