বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পেছন থেকে অপরিণত ৩১ শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও নার্সিং ইনচার্জকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে সুপারিশ করা হয়েছে। দেহাবশেষগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিক হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হাসপাতালের পরিচালক ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক মানিককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান এবং ওই ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠিও পাঠিয়েছেন। তবে ডা. খুরশীদ জাহান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তিনি এই ঘটনার কিছুই জানেন না।
বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘৩১ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিরাজ হাওলাদার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই মো. সাইদুলকে। দ্রুত তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৩১ নবজাতকের মরদেহ সুরতহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ৩১টি মৃতদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মেডিক্যালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘কলেজের গাইনি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃত শিশু সংরক্ষিত থাকে। যেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেগুলো নিয়মানুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। কিন্ত গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহানের নির্দেশে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রণির নারী কর্মচারীরা তা ড্রেন ও ডাস্টবিনে ফেলেছে। যা মোটেই ঠিক হয়নি। এ ঘটনায় জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত দুই জনকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অপরিণত ৩১ শিশুর মৃতদেহ কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে কাচের জারে সংরক্ষিত ছিল। ১৫/২০ বছর ধরে এই মৃতদেহগুলো গাইনি ওয়ার্ডে সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। জারে মেডিসিনের মেয়াদ শেষপর্যায়ে থাকায় এগুলো মাটিচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওয়ার্ড বয়রা কোনও কিছু না বলে হাসপাতালের পেছনে স্তূপ করে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে টোকাইরা অপরিণত শিশুর মৃতদেহ বের করে জারগুলো নিয়ে যায়। মরদেহগুলো ড্রেনে ফেলে দেয়। রাতে ড্রেন পরিষ্কার করতে আসা সিটি করপোরেশনের কর্মীরা দেহগুলো দেখে স্থানীয়দের জানায়। পরে হাসপাতালের কর্মীরা দেহগুলো উদ্ধার করে মাটিচাপা দেয়।