X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিডিউল বিপর্যয় লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেসে, দুর্ভোগ চরমে

মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০১আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০৫

রংপুর এক্সপ্রেসের কোচ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার লাখ লাখ মানুষ রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ এর ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি ট্রেন দুটিতে প্রতিনিয়ত শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, জনবল সংকট, রেল ক্রসিং ও লোকোমোটিভ (ইঞ্জিনজনিত) সমস্যার কারণে ট্রেনগুলো ছড়াতে দেরি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে তাদের।

লালমনিরহাট রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ঢাকা থেকে ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে রাত ১টা ২৫ মিনিটে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ৪ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে পরদিন দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি ১৮ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। বেশ কিছুদিন ধরে এ শিডিউর বিপর্যয় অব্যাহত আছে।

এদিকে, ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিও সময় মতো চলাচল করছে না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারলেও, নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেনি আবার ফিরেও আসতে পারেনি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রংপুর এক্সপ্রেসটি রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রাত ৮টায় ছেড়ে গেলেও দেড় ঘণ্টা দেরিতে পরদিন সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট দেরিতে ছেড়ে আসা ট্রেনটি ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট দেরিতে রংপুরে পৌঁছায়। প্রতি সপ্তাহে এভাবে দেরিতে চলাচল করতে করতে সপ্তাহের শেষদিকে প্রায় ৫ ঘণ্টা শিডিউর বিপর্যয় ঘটছে। বিষয়টি যাত্রীদের নিরাপত্তা জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী শিউলী বেগম বলেন, ‘লালমনিরহাটের সদর উপজেলার শেষপ্রান্ত তিস্তার কাছাকাছি থাকি আমি। নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় ট্রেনে যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু কোনও কোনও দিন রাত ১টা বা ২টার দিকে ট্রেনটি কাউনিয়া স্টেশনে পৌঁছায়। তখন ট্রেন থেকে নেমে বাসায় পৌঁছানোটা নিরাপদ মনে করি না। অথচ ট্রেনটি পৌঁছানোর কথা রাত ৯টার মধ্যেই। কোনও দিনই সঠিক সময়ে ট্রেনটি চলাচল করছে না।’

একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে যাত্রী আইরিন আক্তার বলেন, ‘শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য রাত ১০টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে রওনা হয়েছিলাম। সেই ট্রেনটি বিকাল ৫টার দিকে বগুড়ায় আসার কথা ছিল। লালমনিরহাট পৌঁছেছে ট্রেনটি রাত আড়াইটার পরে। কীভাবে এসব ট্রেনে চলাচল নিরাপদ মনে করি। কর্তৃপক্ষ কী যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা ভাবে না?’

লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া যাত্রী ফেরদৌস আলম বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। আমাদের ট্রেন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে লালমনিরহাট ছেড়ে রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। এতে ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক রাত হবে। গভীর রাতে বাসায় পৌঁছানো আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলে ট্রেন চালানোর মানে নেই। আশা করি, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’

শিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে লালমনিরহাট স্টেশন মাস্টার নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘জনবল সংকটের পাশাপাশি লোকোমোটিভ ও ক্রসিংজনিত সমস্যা প্রকটের কারণে ট্রেনটি সময় তো চলতে পারছে না। যে মাত্রায় ট্রেন চলাচল বেড়েছে, সেই অনুযায়ী ক্রসিংয়ের জন্য স্টেশন এবং রেলওয়ে লাইন স্থাপন করা হয়নি। জনসংখ্যা বাড়ার ফলে ট্রেনে যাত্রী বেড়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সমস্যা মোকাবেলায় দ্রুত লোকোমোটিভ ও জনবল সমস্যা সমাধান প্রয়োজন। ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য প্রত্যেক স্টেশনে ব্যবস্থা রাখা এবং রেললাইন উপযোগী করে গড়ে তোলা দরকার। এসব করতে না পারলে আধুনিক ও কাঙ্ক্ষিত রেলওয়ের সেবা দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘লোকোমোটিভ (ইঞ্জনজনিত) সমস্যা, বিভিন্ন ট্রেন ক্রসিং ও জনবল সংকটের কারণে প্রতিনিয়তই সিডিউল ভেঙে পড়ছে। এরপরও আমরা যাত্রীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

রেল কর্মকর্তা (এটিএস) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘একটি লোকোমোটিভ দিয়ে আপ-ডাউন কাজ চালাচ্ছে লালমনি এক্সপ্রেস। কোচগুলোও পুরাতন হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিডিউল মতো চলছে না।’

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, ‘ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য প্রত্যেক স্টেশনে ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ট্রেন ক্রসিং করাতে গিয়ে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।’

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শিডিউল বিপর্যয় সমস্যার সমাধান করবে। ‘লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেন দুটি সিডিউল মতো পরিচালনার উদ্যোগ নেবে।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা