X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিলেটের তেল ডিপোগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
০২ মার্চ ২০১৯, ০৮:০৫আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ১৪:১৫

 

তেলের ডিপো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সিলেটের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা তেল ডিপো ঝুঁকিপূর্ণ বলে সিলেট  ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হলেও সংশ্লিষ্টরা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক দিনামনি শর্মা বলেন, ‘তেলের ডিপোগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে তদারকি করেছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত টিম। ডিপোগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরিস্থিতি নাজুক।  আমরা লিখিতভাবে তাদেরকে অবহিত করেছি। তারা যদি সচেতন না হন, তাহলে ভবিষৎতে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে, দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।’

সিলেটের ভার্থখলায় পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পদ্মা ডিপো), দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (মেঘনা ডিপো), ও টেকনিক্যাল রোডে যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা ডিপো)। এরমধ্যে পদ্মা ডিপোকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, মেঘনা ডিপোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও যমুনা ডিপোকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্তকারী দল। এই তিনটি ডিপো থেকে সিলেটের পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি করা হয়। এছাড়া এসব ডিপোতে জ্বালানি তেল মজুদও রাখা হয়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে পদ্মা ডিপো, মেঘনা ডিপো, যমুনা ডিপো ফায়ার সার্ভিসের তদন্তের দায়িত্বে থাকা দলটি ক্রমান্বয়ে সিলেটের জ্বালানি সরবরাহকারী ডিপোগুলোতে সরেজমিনে তদন্ত করেছে। তদন্তকারী দলটি ডিপোর দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করে। ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে টেকনিক্যাল রোডের যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছেই দুটি চারকল মিল রয়েছে। প্রতিদিন এই দুটি প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ টন কয়েল লাকড়ি উৎপাদন করা হয়। এসব মিলের চুঙ্গি দিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে ডিপোগুলোর সীমানা প্রাচীরের মধ্যে উড়ে এসে পড়ছে।

যমুনা ডিপোর বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়- ডিপোটিতে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল নেই। এখানে অগ্নিনির্বাপণী  যন্ত্র ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থাপনায় কর্মরত জনবল প্রশিক্ষিত নয়।

তেলের ডিপো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সুপারিশে বলা হয়েছিল, ডিপোটির জ্বালানি তেল সংরক্ষণাগারে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৩৪ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতার সংরক্ষণাগারে কোন হাইড্রেন্ট বা ফিক্সড ফোম গ্রাউন্ড মনিটর নেই। ডিপোর অভ্যন্তরে কোনও জলাধার নেই। এখানে ২ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতার একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ আবশ্যক। ভার্টিকেল ফুয়েল ট্যাংকের চূড়ায় ‘বজ্রপাত নিরোধক’ দণ্ড স্থাপন করতে হবে। এছাড়া এই ডিপোর কর্মীদের নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও মহড়া প্রতিমাসে অন্তত একবার করতে হবে।

যমুনা ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণ করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা তা এই ডিপোতে রয়েছে। তবে ডিপোর অভ্যন্তরে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলায় তা অনেকটা কম রয়েছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর পরই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকায় এই ডিপোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, ডিপোর কাছাকাছি চারকলের দুটি মিল থাকায় অনেকটা ঝুঁকি রয়েছে।’

ফায়ার সার্ভিস সূত্র নিশ্চিত করেছে, পদ্মা ডিপোতেও আগুন নেভানোর জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। কয়েকটি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার রয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে কোনও জলাধার নেই। বালতি ও বালু সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও তা অধিকাংশ স্থানে নেই। এছাড়া কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও মহড়াও হয়না। এই ডিপোর কাছেই খোলা বাজারে তেল ও এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হয়।

এই বিষয়ে পদ্মা ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবিব বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস পদ্মা ডিপোকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে, তা আমার জানা নেই। কয়েকমাস আগে আমি এই ডিপোতে যোগদান করেছি। আগুন নির্বাপণ করার জন্য আমাদের যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা সব কিছুই রয়েছে। তবে, পাশাপাশি বহুতল ভবন থাকায় অনেকটা ঝুঁকি রয়েছে। তবুও সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তারর্ক্ষীদের মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে।’

দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের মেঘনা তেলের ডিপোকেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে। এই ডিপোতেও অগ্নিনির্বাপণ করার জন্য দক্ষ কোনও জনবল নেই। সেইসঙ্গে তেমন কোনও যন্ত্রপাতিও নেই। যা আছে তা কাজ করবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। এখানকার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণও নেই। ডিপোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মেঘনা তেলের ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের তেলের ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণের অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ডিপোর কাছাকাছি দোকানকোটাসহ রেস্টুরেন্ট ও বহুতল ভবন নেই। সেই দিক থেকে আমরা নিরাপদে আছি। এছাড়াও ডিপোতে রয়েছে নিরাপত্তারক্ষী ও সিসি ক্যামেরা।' 
 
ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্টের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি দল আমাদের ডিপোতে এসেছে তদন্ত করে একটি সুপারিশ আকারে পত্র দিয়েছিল। সেই পত্র আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি।'

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
শর্তে একমত হতে পারেননি, বায়ার্ন ছাড়ছেন টুখেল
শর্তে একমত হতে পারেননি, বায়ার্ন ছাড়ছেন টুখেল
ইসরায়েলকে থামাতে হবে, আইসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন
ইসরায়েলকে থামাতে হবে, আইসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব