খুলনা মহানগরীতে হাবিবুর রহমান সবুজ (২৬) নামের ইটভাটা ঠিকাদারের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভগ্নিপতি মো. গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে শনিবার খুলনা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। এছাড়া নিহত সবুজের সঙ্গে খুলনায় বিভিন্ন লোকের আর্থিক লেনদেন কেন্দ্রিক বিরোধের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
আর্থিক এ বিরোধের অংশ হিসেবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে হাবিবের বিরুদ্ধে খুলনার আদালতে মামলা দায়ের এবং তার কারাবাসের ঘটনার বিষয়টি সামনে এসেছে। পুলিশ ওই মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এছাড়া মৃতদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের পর ঘটনা তদন্তে আশপাশের এলাকার বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভির ১০-১১টি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
অপরদিকে, ময়নাতদন্তের পর শনিবার বিকালে লাশের ৭টি খণ্ডিত অংশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এর মধ্যে লাশের মাথা, দুই হাতের চারটি খণ্ড ও পায়ের ওপরের অংশ থেকে থেকে গলা পর্যন্ত দুইটি অংশ ছিল। তবে, নিহতের দুই পা ও শরীরের আরও কিছু অঙ্গ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
একাধিক তদন্তকারী সংস্থার সূত্র জানা গেছে, নিহত হাবিবুর রহমান ও তার সহযোগী আব্দুর রউফ চাকরি দেওয়ার কথা বলে মহানগরীর দৌলতপুরস্থ মহেশ্বরপাশা এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের পুত্র হাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর তাকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে নিহত হাবিব ও রউফকে আসামি করে খুলনা মহানগর হাকিমের আমলি আদালত ‘গ’ অঞ্চলে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে কৌশলে খুলনায় এনে হত্যা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তদন্ত করছে পুলিশ।
এছাড়া নিহতের পরিবার এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘আর্থিক লেনদেন’ ও ‘মোবাইলফোনে সাদি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের কথা পুলিশকে জানিয়েছে।
নিহতের পিতা আব্দুল হামিদ সরদার জানান, সবুজ মঙ্গলবার সকালে মোটরসাইকেলে খুলনায় যায়। বৃহস্পতিবার তার খোঁজ জানতে খুলনায় ফোন করা হলে সাদি নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন এবং জানান ‘মোস্তফা মামার সঙ্গে হাবিব যশোর গেছে’। এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সবুজ ফিরে না আসায় তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি জিডি করেন।
তিনি বলেন, তার ছেলের খুলনায় কারো সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। এই মামলায় কিছুদিন আগে তার ছেলে জেলও খেটেছিল। ব্যবসার টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে তাকে কৌশলে খুলনায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পিবিআই’র খুলনা জেলা প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, মামলাটি পিবিআই তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছে। কয়েকটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহানগরীর শের-এ বাংলা রোডে পলিথিন মোড়ানো মরদেহের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে ফারাজিপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দু’টি ব্যাগে থাকা মাথা ও দুই হাত উদ্ধার করা হয়। তবে তার দুই পা ও শরীরের আরও কিছু অঙ্গ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।