X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিশ্র ফসল চাষে লাভের হাতছানি

কামাল মৃধা, নাটোর
১৬ মার্চ ২০১৯, ১০:৪৬আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৬

মিশ্র চাষাবাদ পদ্ধতিতে সফল মিজানুর রহমান দেশে সমন্বিত পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি আর মাছের চাষের সফলতা থাকলেও এবারে মিশ্র ফসল চাষ, অর্থাৎ ফল-সবজি একসঙ্গে চাষে সাফল্য পেয়েছেন এক উদ্যোক্তা। একইসঙ্গে পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক আর মরিচের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নাটোরের সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান। আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে এখন চিন্তা করছেন একই বাগানে খিরা আর শশার চাষ করার। পাশাপাশি ড্রাগন আর কাশ্মিরি কূলের চাষও করবেন। লাভের হাতছানিতে এখন তার মুখে হাসি।

মিজানুর রহমানের এই ফল-সবজি মিশ্র চাষ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার যুবকরা। তাকে অনুসরণ করে এখন এলাকায় গড়ে উঠছে একই ধরনের বাগান। মিশ্র চাষাবাদ

কলেজপাড়া গ্রামের আলী আশরাফের ছেলে মিজানুর রহমান। অসচ্ছল পরিবারের ছেলে মিজানুর জীবিকার প্রয়োজনে বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেননি। টেনে টুনে কোনোমতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেড়িয়েছেন। এরপরই জীবিকার প্রয়োজনে ছুটতে হয়েছে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন কাজে। এক পর্যায়ে নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে মিজানুর শুরু করেন গরু-ছাগলের চামড়া কেনা-বেচা তথা ফরিয়ার কাজ। এরপর শুরু করেন কীটনাশকের ব্যবসা। স্থানীয় দিঘাপতিয়া বাজারে রয়েছে তার কীটনাশক বিক্রির দোকান। মিশ্র চাষাবাদ

মিজানুর জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে শখ থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী চকফুলবাড়ি সাজির মোড় এলাকায় দুই একর (ছয় বিঘা) জমি লীজ নেন। প্রতি বিঘা জমির বার্ষিক লিজ হিসেবে তাকে গুণতে হবে আট হাজার টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ওই জমিতে এক হাজার ৮শ কলাগাছের চারা রোপণ করেন। সব মিলিয়ে তার খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রথম বছর ভালো ফলন পেলেও দ্বিতীয় আর তৃতীয় বছরে তার কলাবাগান কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় তার লাভের আশা। মিশ্র চাষাবাদ

কিন্তু মিজানুরকে দমাতে পারেনি এই ক্ষতি। তিনি ঝড়ে ভাঙা কলাগাছগুলো কেটে জমি চাষ করান। সেই জমিতে ধানের চাষ করে তিনি সাফল্য পান। এরপর গত বছর ওই জমিতে থাই-৩, থাই-৫ আর মন্টু জাতের ১ হাজার ২শ পেয়ারা চারা রোপণ করেন। সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেন বাদাম। প্রথম পর্যায়ে ৩০ মণ বাদাম পাওয়ার পর জমিতে থেকে যাওয়া বীজ থেকে আবারও ৫ মন বাদাম পান তিনি। ওই বাদাম তিনি বীজ হিসেবে বিক্রি করেন। এর পর পেয়ারাগাছগুলোর গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে বেড তৈরি করেন। একই সঙ্গে তিনি জমির চারদিকে ১ হাজার লেবুর চারা, ৫শ পেঁপে চারা ছাড়াও বাগানের ভেতর চাষ করেন মিষ্টি কুমড়া আর মরিচ। বর্তমানে তিনি প্রতি সপ্তাহেই বিক্রি করছেন লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, মরিচ আর মিষ্টি কুমড়া। মিশ্র চাষাবাদ

এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান জানান, ‘বাগানের পেয়ারা আর পেঁপে রক্ষার জন্য  প্রথমে বাগানের চারপাশ দিয়ে কঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। অথছ পরে হিসাব করে দেখলাম, কাঁটাতারের বেড়া দিলে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হবে। অথচ ওই টাকা থেকে কোনও আয় হবে না। পরে অনেক ভেবে-চিন্তে আমি বাগানের চারদিকে লেবুর চারা রোপণ করি। এতে আমার সর্বমোট খরচ হয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অথচ ওই টাকা থেকে আমার বাগান রক্ষার পাশাপাশি আয়ের পথও খোলা হয়েছে।’ মিশ্র চাষাবাদ

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান দাবি করেন, ‘বর্তমান ফল-সবজি মিশ্র ফসল চাষ করতে আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ ইতোমধ্যেই উৎপাদিত পেয়ারা, পেঁপে, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া আর লেবু বিক্রি করে প্রায় অর্ধেক টাকা উঠে এসেছে। বড় ধরণের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী এক বছরের মধ্যে আমার পুরো খরচ উঠে যাবে। বাকি ২-৩ বছর আমি লাভের অঙ্ক গুণতে পারবো।’

মিজানুর বলেন, ‘শখের বশে বাগান করেছি। তবে বাগানে আসলেই আমার মনটা ভরে যায়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের বিভিন্ন উৎপাদিত ফল আর সবজি উপহার দেওয়ার পরও বিক্রি করে যে টাকা আয় হচ্ছে তাতে আমি খুশি। আমার বাগানের পেয়ারা সর্বোচ্চ ১ কেজি ২০০ গ্রাম আর পেঁপে সর্বোচ্চ আড়াই কেজি ওজনের হয়েছে।’ মিশ্র চাষাবাদ

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর জানান, ‘আমার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার যুবকরা উৎসাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমার পথ অনুসরণ করে স্থানীয় হাঘুড়িয়া এলাকায় আমার এক বন্ধুও একই রকম ফল-সবজির বাগান করছে। আমি মাঝে মাঝেই সেখানে গিয়ে তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেই।’

নতুন বাগানী রাজা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘আমার বাগানে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন ফল পাওয়া যাবে। ফল পাওয়া শুরু হলেই খরচ উঠে মিজানুর রহমানের মতো লাভের মুখ দেখতে পারবো আশা করছি।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান জানান, ‘আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে আমি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাগানে খিরা আর শশাচাষ করবো। এছাড়া শিগগিরই আমি আমার বাগানে ড্রাগন আর কাশ্মিরী কূল চাষ করবো। ওই গাছগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে কলম কেটে পুরো বাগানে ড্রাগন আর কূলের চারা ছড়িয়ে দেবো। পাশাপাশি নতুন জায়গা লিজ নিয়ে ড্রাগন আর কাশ্মিরি কূলের চাষ করবো বলে ভাবছি।’ মিশ্র চাষাবাদ

মিজানুর জানান, বর্তমানে তার বাগান থেকে বিভিন্ন ফল স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও বগুড়া, ফরিদপুর, রাজশাহী আর ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে ড্রাগন আর কাশ্মিরি কূলের চাষ করতে পারলে তাও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে। তবে একাজে সরকার তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করলে তার উদ্যোগের গতি বাড়বে বলে দাবি করেন। তিনি এব্যাপারে সরকারি সাহায্য কামনা করেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মিশ্র ফসল চাষে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করি। মিজানুর সেই পথেরই অনুসরণ করেছেন। তিনি সফলতা পাবেন আশা করি।’

এ ধরনের উদ্যোগে সরকারি সাহায্য পাওয়া সম্ভব কিনা এই প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় উদ্যোক্তা আর কৃষকদের চাষাবাদে কৃষিব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য ব্যাংক থেকে সহজশর্তে ঋণের সুবিধা রয়েছে। মিজানুর চাইলে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
অবশেষে প্রার্থিতাই প্রত্যাহার করে নিলেন প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!