X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা-যশোরে মিলে কাঁচাপাট না থাকায় উৎপাদনে ধস, শ্রমিকদের আন্দোলন

খুলনা প্রতিনিধি
১৮ মার্চ ২০১৯, ১৫:২৮আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৯, ১৫:২৮

খুলনা

কাঁচাপাটের অভাবে বর্তমানে খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ১ হাজার ৯১৪টি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে কাঁচাপাট কিনতে না পারায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদনে ধস নেমেছে।

জানা যায়, খালিশপুরে স্টার জুট মিলে কাঁচাপাট মজুদ আছে মাত্র ৬ দিনের। ইস্টার্ন মিলে কাঁচাপাট রয়েছে ১০ দিনের। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রায় ২৯০ কোটি টাকার পাটপণ্য অবিক্রিত পড়ে আছে। একই সঙ্গে বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবস্থার পরিবর্তন, পুরানো ধাচের পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করাসহ পাটপণ্যের বহুমুখি উৎপাদন ও নতুন বাজার তৈরির সুপারিশ করেছেন বিশ্লেষকরা।   

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘সময় মতো কাঁচাপাট কিনতে না পারা ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় আমাদের পাটকলগুলোতে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের স্যাকিং ও পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে পাটকলে চাহিদা সম্পন্ন আধুনিক মানের পাটপণ্য তৈরি করতে হবে। একদিকে কাঁচাপাটের অভাব, অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্য সময় মতো বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সংকট তীব্র হয়েছে।’

জানা যায়, পাটপণ্যের বহুমুখি ব্যবহারে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলে পাটের লেমিনেটেড ব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাভজনক হলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে এই ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানো যায়নি। পণ্যের মোড়কে পাটজাত পণ্য ও পরিবেশ রক্ষায় পাটের লেমিনেটেড ব্যাগ ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

এদিকে পাটের সঙ্গে ভেড়ার পশম (উল) মিশিয়ে সূতা তৈরিসহ ১০টি পরিকল্পনা নিয়েছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ সব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বাণিজ্যিকিকরণে সহায়তা দেওয়া, প্রচলিত পাট পণ্যের মান উন্নয়ন ও পাট পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজিকরণের জন্য জুট মিলগুলোর যন্ত্রপাতির মান উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পাটের সূক্ষ্ম বা চিকন সূতা উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রচলিত বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মান উন্নয়নপূর্বক উৎপাদন খরচ হ্রাস করা।

বিজেএমসি’র তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা না থাকায় খুলনা ও যশোরের ৯টি পাটকলের গোডাউনে প্রায় ১ লাখ ৩০৯ টন পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৯০ কোটি টাকা।

পাট ও পাট শিল্প রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন বলেন,‘অনেক সময় বিজেএমসি’র সিদ্ধান্তহীনতার কারণে উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রি হয় না। তারা বিদেশে বাজার সৃষ্টি করতে পারে না। অনেক সময় বিদেশের বাজারে পণ্যের দাম মাত্র ১ ডলার বেশি পাওয়ার জন্য অহেতুক সময় নষ্ট করে। এর ফলে আরও দর পতন হয়।

তিনি আরও বলেন,‘পাট শিল্প রক্ষায় পাটকলগুলোতে বিএমআর, মৌসুমে পাট ক্রয় ও পাটপণ্যের বহুমুখি উৎপাদনের দাবি জানানো হয়েছে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মো.সোহরাব হোসেন বলেন,‘সময় মতো কাঁচাপাট কেনার টাকা ছাড় না দেওয়ায় মিলগুলোতে আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। টাকা না থাকায় মৌসুমে পাট কিনতে না পারায় পরবর্তীতে ওই পাটই মনপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দরে কিনতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বেড়ে যায়। এ সব সংকটের পাশাপাশি গত ৪ মার্চ থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে পাটকল শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। মজুরি কমিশন, গ্রাইচুইটি, পিএফ’র টাকা ও বদলী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করলেও তা’ বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক হাবিবুর রহমান জানান, গত সাত সপ্তাহ মজুরি পাই না। যে কারণে দোকান থেকে বাকিতে চাল ডাল নিয়ে কোনভাবে একবেলা খেয়ে বেঁচে আছি। মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ ব্যালান্স দু’শত টাকা উঠাতে এসেছি। সেই টাকা দিয়ে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করাবো।’ ৯ পাটকলের প্রতিটি শ্রমিক পরিবারের একই চিত্র বলে তারা জানায়।

ক্রিসেন্ট জুটমিলের প্রকল্প প্রধান গাজী শাহাদাৎ হোসেন জানান,‘গেল দু’বছর সরকারিভাবে পাট ক্রয়ের জন্য কোনও অর্থবরাদ্দ হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রি করতে না পারায় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে পাট কলগুলো। তাই শ্রমিক কর্মচারিদের মজুরি বকেয়া পড়েছে। এ কারণে চরম আর্থিক কস্টে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমিকদের। সরকারিভাবে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধব পাটপণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করলে এই খাত সব সঙ্কট কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছি।’

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক অফিসের লিয়াজো কর্মকর্তা শেখ রহমত উল্লাহ জানান, একদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে কাঁচাপাট কেনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাহিদা না থাকায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মিলগুলোর অর্থসংকট তীব্র। একই সঙ্গে শ্রমিকরা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর রোয়েদাদসহ দাবি ও সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ, গ্রাচ্যুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া দেওয়া, টার্মিনেশন, বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকদের কাজে পুনঃবহাল, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, মৌসুমে পাট ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করার দাবিতে গত ২ মার্চ ৭ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ, নন সিবিএ নেতারা। কর্মসূচির অনুযায়ী ৪ মার্চ রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল, ৮ মার্চ সারাদেশের পাটকল শ্রমিক সমাবেশ ও ১০ মার্চ লাল পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। ১২ মার্চ সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন শুরু হয়। ১৯ মার্চ আবারও ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল পালিত হবে। ২৪ মার্চ ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা