X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা ও মহানন্দায় জাগছে চর, নামছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
১৯ মার্চ ২০১৯, ১৭:৫৮আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ১৯:২৯

পদ্মা ও মহানন্দায় জাগছে চর (ছবি– প্রতিনিধি)

পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। জাগছে ডুবোচরও। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে। একইসঙ্গে কমছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী শহর থেকে সরে যাচ্ছে পদ্মার পানির গতিপথ। কারণ, শহরের তীরঘেঁষে চর জেগেছে। এ ছাড়া, গোদাগাড়ী উপজেলার বালিয়াঘাটা থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত মহানন্দা নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং সুলতানগঞ্জ মোহনা থেকে প্রেমতলী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পদ্মা নদীর ৬০ ভাগ এলাকায় পানি নেই। ৪০ ভাগ এলাকায় পানি থাকলেও নদীর গভীরতা খুবই কম। নদীর মাঝপথে অসংখ্য ডুবোচরের কারণে নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

একসময় পানিতে পরিপূর্ণ ছিল পদ্মা। পদ্মায় পানি ভরে থাকার কারণে নদী উত্তাল হয়ে থাকতো। আর এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় কৃষি জমিতে পানি পেতে বেগ পোহাতে হয়।

পদ্মাপাড়ের ৯০ বছরের বৃদ্ধ সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিপুর থেকে নৌকা অথবা জাহাজে মালভর্তি করে সরাসরি গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার বন্দরে আসত। আবার রেলবাজার বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে ভারতের উদ্দেশে নৌকা ও জাহাজগুলো রওনা হতো। কিন্তু নদীর পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। নদীর এই দুরাবস্থার কারণে পাকিস্তান আমলে গোদাগাড়ীর রেলবাজার বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়।’

পদ্মা ও মহানন্দায় জাগছে চর (ছবি– প্রতিনিধি)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘নদীর ধর্মই হচ্ছে পরিবর্তন। নদীর গতিপথ পরিবর্তনই হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। সেদিক থেকে বলা যায়, নদী সবসময়ই তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এখন যেমন শহর থেকে নদীর গতিপথ সরে যাচ্ছে। শহরের পাশেই বড় বড় চর পড়ছে। তার ঠিক উল্টোটা ঘটছে নদীর ওই পাশে। নদীর ওই পাশে চর খানপুর ও চর খিদিরপুরে ভাঙন হচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে ওই পাশে বিলীনের পথে। ফলে পানির প্রবাহ ঠিক থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পানির প্রবাহ ঠিক না থাকলে এইরকম ভাঙা-গড়া চলতেই থাকবে। আর আমরা প্রতিনিয়ত দুরাবস্থার সম্মুখীন হবো। এজন্য পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। আর এই হিসাবটাও করতে হবে পুরো গঙ্গা রিভার বেসিন অনুযায়ী। শুধু ফারাক্কা থেকে কত কিউসেক পানি আসছে, তার উপর বিষয়টা নির্ভর করে না।’

চৌধুরী সারওয়ার জাহান আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যে গঙ্গা চুক্তি হয়েছে ফারাক্কায় কত কিউসেক পানি আছে তার উপর হিসাব করে। অথচ ফারাক্কায় পানি আসার আগেই উজানের বিভিন্ন জায়গায় ড্যাম করে পানি আটকে ফেলা হয়েছে। ফলে ফারাক্কায় পানির প্রবাহটাই কম আসে। সেখান থেকে হিসাব করে তো একটা নদীর প্রবাহ ঠিক রাখা যাবে না। এজন্য পানির প্রবাহটা বাড়াতে হবে।’

গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পদ্মার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া জোনের একটি বিশেষজ্ঞ দল পদ্মা পরিদর্শন করে ড্রেজিং করার জন্য একটি সুপারিশমালা সরকারের কাছে পাঠায়। কিন্তু ড্রেজিং না হওয়ার কারণে পদ্মার গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং দিন দিন তার পুরাতন রূপ হারাচ্ছে।’

পদ্মা ও মহানন্দায় জাগছে চর (ছবি– প্রতিনিধি)

এদিকে, শহর সংলগ্ন পদ্মা নদীর চরে তেমন ফসল আবাদ হয় না। দিনের বেলায় ছেলেমেয়েদের ঘুরাঘুরি ও খেলাধুলার জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, মহানন্দা নদীতে ডুবোচর জেগে উঠায় ও পানি কমে যাওয়ার কারণে নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বাধ্য হয়ে লোকজনকে এক হাঁটু পানি পার হয়ে নৌকায় উঠতে হয়। তবে এক হাঁটু পানিতে নামার কারণে নারীদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।

পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণে সরমঙ্গলা, সুলতানগঞ্জ, হাতনাবাদ ও বালিয়াঘাট্টা সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদী থেকে এই চারটি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো জমিতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু নদীর দুই পাড়ে ও মধ্যখানে চর জেগে উঠায় সেচ প্রকল্পগুলোর জন্য বসানো পাম্প পানি কম উঠছে। গত কয়েক বছর ধরে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপ ও অগভীর নলকূপগুলোতে (সেমি-ডিপ) তেমন পানি উঠছে না।

পদ্মা ও মহানন্দায় জাগছে চর (ছবি– প্রতিনিধি)

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ অপারেটররা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ৮০-১১০ ফিটের মধ্যে পানির স্তর উঠানামা করছে। সেচের জন্য বসানো নলকূপগুলোতে পানি কম উঠায় সেচ খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলেও কৃষকরা জানান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। আবার পদ্মায় পানির প্রবাহ ঠিকমত না থাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপও পড়ছে। ফলে পানির লেভেল নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে যদি ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়তেই থাকে, তাহলে একসময় মরুকরণের দিক ধাবিত হতে পারে এই অঞ্চল।’

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা