X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেল লাইনের বেহাল দশা, সড়কপথে রেলমন্ত্রী

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২৩ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫৪আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ১১:১৬

 

 

 

রেল লাইনের বেহাল দশা, সড়কপথে রেলমন্ত্রী

উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগে ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সফর করেছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। জেলা রেল স্টেশন পরিদর্শনের পর তিনি জানিয়েছেন, প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। রেল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করে স্থানীয়দের দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে মন্ত্রী সরেজমিনে রেলপথের অবস্থা না দেখায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, রেল লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মন্ত্রী সড়কপথ ব্যবহার করেছেন। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি ও সময় স্বল্পতার কারণে রেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না মন্ত্রীর।

জানা যায়, চিলমারীর রমনা রেল স্টেশন থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রামের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। উত্তরের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের নগরের সঙ্গে যুক্ত করতে ১৯৬৮ সালে এই রুট সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু পরে আর তেমন কোনও সংস্কার না হওয়ায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাওয়ার মতোই বেঁচে আছে এই রেলপথ। এই রেল লাইনের অধিকাংশ স্লিপারই নষ্ট, পাথরও নেই পর্যাপ্ত, এমনকি ফিসপ্লেটের নাটবল্টুও অনেক জায়গায় খোলা; তাই রেলে যাতায়াত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এই সামান্য পথ যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। এই কারণে রেলের সূচি ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর অভিমুখী তিস্তা রেল স্টেশন পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেল লাইনের অবস্থাও মোটামুটি একইরকম। তিস্তা থেকে রংপুর আরও ২১ কিলোমিটার। নামেমাত্র রুট সচল থাকলেও জনগণের জন্য তা খুব কাজে লাগছে না। ঝুঁকি আর ভোগান্তিকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিনিয়ত এই রুটে মানুষের পথচলা।

রেল লাইনের বেহাল দশা, সড়কপথে রেলমন্ত্রী

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কুড়িগ্রামে একটিমাত্র ট্রেন (লোকাল ট্রেন) চলাচল করছে। এই একটি ট্রেন ভিন্ন নামে দুই বার যাতায়াত করছে। কিন্তু তিস্তা থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেল পথের বেহাল দশার কারণে বেশ ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। রেল লাইনের স্লিপার, পাথর এবং কোনও কোনও স্থানে মাটি ও গাইড ওয়াল সরে যাওয়ায় নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক কম গতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রংপুর থেকে ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে কুড়িগ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী একটি শাটল ট্রেন দেওয়া হলেও কুড়িগ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সীমিত থাকায় তার সুফলও ভোগ করতে পারছে না জেলাবাসী।

কুড়িগ্রাম-রংপুর, কুড়িগ্রাম-ঢাকা কিংবা কুড়িগ্রাম-চিলমারী (রমনা)সহ বিভিন্ন রুটে বাস যোগাযোগ থাকলেও ভাড়া অনেক বেশি ও সড়কপথের বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে রেলমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

রেল লাইনের বেহাল দশা, সড়কপথে রেলমন্ত্রী

জানা যায়, রমনা-কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথের আধুনিকায়নের জন্য স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘদিনের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২২ মার্চ) তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনা লাইনের সার্বিক অবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। প্রথমে লালমনিরহাট এক্সপ্রেসে করে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট এবং পরে সড়কপথে লালমনিরহাট থেকে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীর রমনায় রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, লাইনের অবস্থা খারাপ জন্যই মন্ত্রী সড়ক পথে এসেছেন। তিনি রেলস্টেশন পরিদর্শনও করেছেন। কিন্তু এই রেলপথ নিজে না দেখলে উনি প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে পারবেন না। কারণ কিছুদিন আগে রেল স্টেশনের বিল্ডিং বানানোসহ অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। তবে রেলপথের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। তাই তিনি যদি শাটল ট্রেনে করে লালমনিরহাট থেকে কাউনিয়া হয়ে কুড়িগ্রাম আসতেন অথবা রেল বিভাগের নিজস্ব ট্রলিতে করে এই রুট ভ্রমণ করতেন তাহলে প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারতেন।

রেল লাইনের বেহাল দশা, সড়কপথে রেলমন্ত্রী

রেলমন্ত্রীর সড়ক পথে কুড়িগ্রাম সফরের বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির জেলা (কুড়িগ্রাম) শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। রেলমন্ত্রী ট্রেনে বা ট্রলিতে করে কুড়িগ্রাম আসতে পারতেন, তাহলে অন্তত রেল পথের অবস্থা দেখতে পারতেন। আসলে এই রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ জেনেই তিনি হয়তো সড়ক পথে কুড়িগ্রাম সফর করছেন।’

রেলপথ আধুনিকায়নের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি’র জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার রায় জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে চিলমারী-ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি করে আসছি।’ এই রুটে একটি লোকাল ট্রেন ছাড়া কোনও আন্তঃনগর ট্রেন না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তিনি।

তবে মন্ত্রীর রেলপথ ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে ঝুঁকির প্রসঙ্গ অস্বীকার করে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যে ধরনের ট্রেন (লোকাল ট্রেন) ওই রুটে চলে, একজন মন্ত্রী কী ওই ট্রেনে যেতে পারেন!’

এরপর তিনি আরও বলেন, ‘সময় স্বল্পতা ও বিশেষ কোনও ট্রেন না থাকায় মন্ত্রী মহোদয় সড়কপথে কুড়িগ্রামে গিয়েছেন। আর তার বহরে অনেক লোক থাকার কারণে ট্রলিতে করে রেল লাইন দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুবলীগ নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুবলীগ নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল