X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও স্বীকৃতি পাননি রাণীনগরের ১০ বীরাঙ্গনা

আব্দুর রউফ পাভেল
২৩ মার্চ ২০১৯, ১১:৫২আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:২৮

মায়া সূত্রধর স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনা। এজন্য সরকার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই নারীরা বীরোচিত ভূমিকা রাখলেও আজও স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনাদের মধ্যে রয়েছেন রেনু বালা, মায়া সূত্রধর, বাণী পাল, কান্তা পাল, রাশমুনি সূত্রধর, কালীদাসী পাল, সুষমা পাল, সন্ধ্যা পাল, ক্ষান্ত বালা পাল। এদের মধ্যে বাণী পাল ও কান্তা পাল মারা গেছেন।একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রনা, সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি দুঃখ-দুদর্শা আর অভাব-অনটনের মধ্যেই চলছে জীবিতদের জীবন। সরকার বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সেই তালিকায় নওগাঁর রাণীনগরের ১০ জন বীরাঙ্গনার নাম তালিকাভূক্ত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তাদের পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

কালী দাসী পাল রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার-আলবদরদের সহযোগীতায় প্রকাশ্য দিবালোকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায়। এসময় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ সংখ্যালঘু পরিবারের কিশোর, যুবক ও বিভিন্ন বয়সী নারীদেরকে ধরে সুরেস্বর পালের বাড়ির বারান্দায় একত্রিত করে। তারপর ব্রাশফায়ার করে গোবিন্দ চরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারন পালসহ ৫২ জনকে নির্বিচারে হত্যা করে। এসময় নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।'

পাক-বাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার কালীদাসী পাল জানান, ‘ওইদিন সকালে যখন আমাদের গ্রামে পাকিস্তানিরা আসে তখন আমার স্বামীসহ সবাই বাড়ির দরজা লাগিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে টেনে হিঁচড়ে পাঞ্জাবিরা রাইফেল দিয়ে মারতে মারতে যোগেন্দ্রনাথের বারান্দায় নিয়ে যায়। স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইতে গেলে আমার কথা না শুনে চোখের সামনে আমার স্বামীসহ ৫২ জনকে হত্যা করে। এসময় আমার উপরও তারা নির্যাতন চালায়।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না।’

প্রত্যক্ষদর্শী সুষমা পাল বলেন, ‘ওইদিন সকাল ৯টার দিকে পাকিস্তানিরা আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে সুরেশ্বর পালের বাড়িতে লাইন করে রাখে। এসময় পাকিস্তানিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নির্যাতন চালায়। আমি ছোট ছেলেকে নিয়ে পাশের বাড়ির মাটির ডাবরের ভেতর আশ্রয় নেই। বাচ্চার কান্না পাকিস্তানিরা শুনতে পেয়ে আমাকে সেখান থেকে বের করে আনে এবং আমার ওপর নির্যাতন চালায়।'

সুষমা পাল প্রয়াত বাণী পালের ছোট ভাই জয়ন্ত পালের কাছে একাত্তরের ঘটনার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘একাত্তরের ২৫ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে নদী পার হয়ে রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী আমাদের পাড়ায় ঢুকে লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ শুরু করলে বাণী পালের চোখের সামনে তার বাবা শ্রীমন্ত পালকে ধরে মারপিট শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে বীরের মতো সেই সময়ের কিশোরী বাণী পাল পাকিস্তানিদের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পাশের একটি কূপে ফেলে দিয়ে হাতাহাতি শুরু করলে পাক-হায়েনারা তার বাবাকে গুলি চালালে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় ভাগ্যক্রমে সে বাঁচলেও বাণী পাল তাদের নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে রেহায় পাননি।’

আতাইকুলা গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য গৌতম পাল জানান, ‘স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক সময় অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা এই গ্রামের শহীদ ও বীরাঙ্গনার পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়ও তাদের নামের স্থান হয়নি। বড় পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও এ দফতর সে দফতর ঘুরেও আমাদের কোনও একটা সুরাহা হলো না।’

সন্ধ্যা রানী পাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এই গ্রামের বীরাঙ্গনা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্ত করেছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘এই গ্রামের বীরাঙ্গনাদের দ্রুত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর পাঠিয়েছি। আশা রাখি সরকার বিষয়টি সুদৃষ্টি সহকারে দেখবে।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, 'বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। আতাইকুলা গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনার ব্যাপারে নিয়ম মাফিক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন তারা তালিকাভূক্ত হতে পারেন সে ব্যাপারে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

/এসএসএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!