X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীর বেশিরভাগ নদীই এখন ফসলের মাঠ

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৪৬আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৪৬

নীলফামারীর বেশিরভাগ নদীই এখন ফসলের মাঠ নীলফামারী জেলার ওপর বয়ে যাওয়া বেশিরভাগ নদীই এখন পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে। নদী দখল করে সেখানে করা হচ্ছে ইরি, বোরো ধানের চাষ। আবাদ হচ্ছে ভুট্টা, কুমড়া, মরিচ ও পেঁয়াজসহ নানা জাতীয় ফসল। তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নদী দখল হলেও তা রক্ষায় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে নীলফামারীবাসীর অভিযোগ।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার নদনদী। এসব নদীর মধ্যে রয়েছে- প্রমত্তা, তিস্তা, বুড়িতিস্তা, চাড়ালকাটা, বুড়িখোড়া, ধুম, বামনডাঙ্গা, পাঙ্গা, কুমলাই, নাউতারা, যমুনেশ্বরী, ইছামতি, কলমদার, খড়খড়িয়া, বুল্লাই, দেওনাই, শালকী, খেরকাটি, চারা নদী, খেড়ুয়া, চিকলী, আউলিয়াখানা ও নাউতারা নদী। নাব্যতা হারিয়ে বেশিরভাগ নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনেশ্বরী নদীর বেহাল দশা। নদীটি দখলের কবলে পড়ে আজ মৃতপ্রায়। জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নে সড়ক বিভাগের নির্মিত হরতকীতলা সেতুর উজান এবং ভাটিতেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য। সেখানে ফলানো হচ্ছে ধানসহ নানা ফসল।

পলাশবাড়ি ইউনিয়নের তরণীবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যনি শ্যামচরণ রায় (৯৫) বলেন, ‘যমুনেশ্বরী নদীটাকে নিজের চোখে দেখেছি। এই নদীতে মাছ ধরে জেলেরা তাদের সংসার চালাতো। অনেকে নদীপথে দূর-দূরান্ত থেকে এই এলাকায় বাণিজ্য করতে আসতো। এখন নদীটি অবৈধভাবে দখল হওয়ার দৃশ্য দেখছি।’

একই ইউনিয়নের কামার পাড়া গ্রামের রহিদুল ইসলাম (৮২) বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই এটি একটি বড় নদী ছিল। যে যেভাবে পারছে, দখল করছে।’

সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন প্রামানিক (৮৫) বলেন, ‘নদীতে পলি পড়ে কিছু কিছু অংশ ভরাট হয়ে গেছে। তাই খনন করা গেলে এ অঞ্চলের মানুষ চাষাবাদে সুবিধা পেতো।’

নীলফামারীর বেশিরভাগ নদীই এখন ফসলের মাঠ জেলা শহর ঘেঁষে বয়ে গেছে আরেকটি নদী বামনডাঙা। এই নদীর তীরেই একসময় গড়ে উঠেছিল শাখামাছা বন্দর। দূর-দূরান্ত থেকে নদীপথে চলাচল করতো বড় বড় মালবাহী নৌকা। ওই সময় জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান বন্দর ছিল এটি। নদীটি পড়েছে দখলদারদের কবলে, পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে। এ ছাড়াও, দখলদারেরা প্রতিনিয়ত সেখানে নির্মাণ করছেন বিভিন্ন স্থাপনা।

জেলা শহরের সরকার পাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৭৫) বলেন, এক সময় যে নদীতে স্রোতের টানে দাঁড়ানো যেত না, এখন সেই নদী শুধু বালি আর বালি। প্রতিদিন মানুষ দখল করছে, বাড়ি করছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করছে, এসব দেখার কেউ নেই।

একই মহল্লার হাফিজুল ইসলাম (৬১) বলেন, চৈত্র মাসে যে নদীতে আগে অথৈই পানি দেখেছিলাম আর এখন দেখছি সেই নদীতে কৃষকেরা ফসল ফলাচ্ছেন।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িখোড়া নদী। প্রায় ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই নদীর উৎপত্তিস্থল জেলার ডোমার উপজেলার কলামদার থেকে। ৩৮ মিটার প্রস্থ ও আড়াই মিটার গভীরতার নদীটি এখন পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। ওই ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামে সন্নাসির ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ওই নদীর বুক জুড়ে বোরো ধানের আবাদ ও ভুট্টা চাষ।

ওই গ্রামের বিদ্যাচরন রায় (৬৯) বলেন, ভরাট হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে নদী। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি পাচ্ছি না, আবার বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে বাড়িঘর তলিয়ে যায়।

জেলার ডোমার উপজেলার কলমদার নদীরও একই দশা। নদী ভরাট হওয়ায় এখন অনেকে দখল করে ধান আবাদ করছেন।

জেলায় উল্লেখযোগ্য ছিল দেওনাই নদী। এখন আস্তে আস্তে মানুষ সেটিও দখল করে নিয়েছে। নদীতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলায় ছোটবড় ১৮ টি নদনদী আছে। নদীগুলো দখলমুক্ত করতে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। এজন্য জেলার নদনদীগুলোর তালিকা গত ফেব্রয়ারি মাসে নদীরক্ষা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’

নদী রক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভারাইন পিপল বাংলাদেশের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘দখল হওয়া এসব নদী উদ্ধারে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে নদীরক্ষা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহিনুর আলম বলেন, ‘দখলমুক্ত করতে জেলার সব নদী চিহ্নত করতে ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে জেলার নদনদী খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি নদী পূনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে, আরও কয়েকটির টেন্ডার হয়েছে। সব নদী খনন ও উদ্ধারে জোড়ালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া