X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ তলায় উঠেও বাঁচতে পারেননি যশোরের বৃষ্টি

যশোর প্রতিনিধি
২৯ মার্চ ২০১৯, ১৬:৪৩আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৯, ১৬:৫০




বৃষ্টির লাশ যশোরের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ৎ আগুন আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে বনানীর এফ আর টাওয়ারের ১২ তলা থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত উঠেছিলেন যশোরের মেয়ে শেখ জারিন তাসমিম বৃষ্টি। অগ্নিকাণ্ডের পর স্বামী, বাবাসহ স্বজনদের কাছে বারবার বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন। উপায় জানতে চেয়েছিলেন নরককুণ্ড থেকে বাঁচার। কিন্তু শেষ রক্ষা তার হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এফ আর টাওয়ারের আগুনে নিহত বৃষ্টির বাবার বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বৃষ্টির মরদেহ পৌঁছায় যশোর শহরের বেজপাড়া মেইনরোডের পাশে বাবা শেখ মোজাহিদুল ইসলামের বাড়ি ‘প্রতীক্ষা’-তে। মরদেহ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে নিহতের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীদের মধ্যে কান্নার রোল ওঠে। এরপর মরদেহ গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির সামনের উঠানে রাখা হয়। দুপুরে বৃষ্টির মরদেহ পৌঁছানোর পর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মসজিদে প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়।

বৃষ্টির লাশ ধেখে স্বজনদের আহাজারি বাবা শেখ মোজাহিদুল ইসলাম জানান, বাদ আছর ফের বেজপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে তাকে তাকে শহরের কারবালা গোরস্তানে দাফন করা হয়। বৃষ্টির বাবাসহ স্বজনরা এই মৃত্যুর জন্যে বিল্ডিংয়ের মালিকসহ প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এ ঘটনার জন্যে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমন কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। বিনা কারণে যেন মানুষ মারা না যায়।

নিহতের বাবা শেখ মোজাহিদুল ইসলাম এবং শ্বশুর কাজী ইরাদ বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি ভবনটির সিঁড়ি মোটে তিন ফুটের। এরকম সরু সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামা সম্ভব নয়। তাছাড়া ইমার্জেন্সি এক্সিট পথগুলো বন্ধ করে দারোয়ানরা আগেই পালিয়ে যায়; সে কারণে রুমে থাকা মানুষজন আর বের হতে পারেনি।

তাদের দাবি, বিল্ডিংয়ের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কোনও উপায় ছিল না। কেননা ছাদে উঠার দরজাও ছিল বন্ধ।

স্বামীর সঙ্গে বৃষ্টি নিহতের স্বামী যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার কাজী সাদ নূর বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। বৃষ্টি বলছিল- আগুন আর ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমি তাকে বলি, দৌঁড়ে উপরের দিকে চলে যাও। ১৮ তলায় অবস্থানকালে সে (বৃষ্টি) জানায়- ধোঁয়ার কারণে আর যেতে পারছে না। এ সময় পাশ থেকে তার এক সহকর্মী তাকে সান্তনা দিচ্ছিল।’

এরপর থেকে তার সঙ্গে মোবাইলফোনে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। মোবাইলফোন সেট অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। সাদ নূর বলেন, ‘আমার ছোটভাই বৃষ্টির নম্বরে লাগাতার ফোন দিতে থাকে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোনকল রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে বলা হয়- তিনি ফায়ার সার্ভিসের লোক। সিমের মালিক মারা গেছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের ওই ব্যক্তি নূরকে জানান, মৃতার ফোনসেট থেকে সিম বের করে তিনি ফোনকল রিসিভ করেছেন।’

দুই বোনের মধ্যে বৃষ্টি ছিল ছোট। বড়বোন সানজিদা ইসলাম ববিও ঢাকায় বসবাস করেন।
স্বামী সাদের সঙ্গে বৃষ্টি বৃষ্টির চাচা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অত্যন্ত মেধাবী ও মিশুক ছিল বৃষ্টি। বাদ আছর তার নামাজে জানাজা শেষে যশোর কারবালা কবরস্থানে তার দাফন করা হবে।

যশোর শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী বৃষ্টি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। মানবসম্পদ বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কাজ করতেন বনানীর এফআর টাওয়ারের ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডে।
২০১৬ সালে ২৬ মার্চ সহপাঠী যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার কাজী সাদ নূরের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কাজী সাদ নূর ঢাকার রিজেন্সি হোটেলের সহ-ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। চাকরির সুবাদে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাস করতেন তারা। মাত্র দু’দিন আগে ২৬ মার্চ তৃতীয় বিয়েবার্ষিকী উদযাপন করেন তারা। বৃষ্টি তার ফেসবুকে স্বামীর সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে হ্যাশট্যাগে লিখেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ, একসাথে ১০৯৫ দিন, শুভ বিবাহবার্ষিকী, ২৬ মার্চ মিস্টার ও মিসেস নূর- ইত্যাদি। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত একদিন পরই স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া