বাদাম চাষে ঝুঁকছেন বান্দরবানের চাষিরা। দিন দিন বাড়ছে বাদামের চাষ। সাঙ্গু নদীর দুই পাশের চরে বাদাম তোলায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জেলা সদরের বালাঘাটা, ভরাখালী ও ক্যামলংসহ সাঙ্গু নদীর তীরে বিস্তীর্ণ জমিতে হচ্ছে বাদামের আবাদ।
বাদাম চাষি নূরুল হক বলেন, ‘গত বছর কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের বাদামের বীজ দেওয়া হয়েছিল। সে বীজ দিয়ে আমি ৫ কানি (১ কানি = ৩৩.৫ শতাংশ) জমিতে বাদাম চাষ করেছি। আমার মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর বাদাম বিক্রি করেছি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।’
চাষি মর্জিনা জানান, ‘গত বছর ৪ কানি জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এ বছর ৫ কানি জমিতে চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদাম ভালো হয়েছে, লাভও বেশি হচ্ছে।’
চাষিদের অভিযোগ, বাজারে শেড না থাকায় ৫ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। এজন্য তারা বাদাম ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। একটি বাজারশেডের ব্যবস্থা করলে আরও লাভবান হতে পারতেন বলেও দাবি করেন তারা।
চাষিরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষেত থেকে এই বাদাম তোলা শুরু হয়। বাদামের বীজ লাগানোর আগে হাল চাষ দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হয়। আর পরিষ্কার করতে হয় আগাছা। তারপর সারি সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ। সাঙ্গু নদীর চরের মাটি উর্বর হওয়ায় দিতে হয় না অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক। তিন মাসের মধ্যেই পরিপূর্ণ বাদাম ফলে। তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষিরা।
বান্দরবানের বাদামের মান ভালো হওয়ায় প্রতিবছর বান্দরবান থেকে কক্সবাজার, চকরিয়া, টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারদের কাছে যায় এখানকার বাদাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাহিদা থাকায় বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদাম কিনে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করেন বেপারিরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৯৯৯ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছে। গত বছর বান্দরবানে ৯৭১ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২১ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয়। জেলায় এখন ত্রিদানা, মাইজচর, ঝিঙ্গা, বিনা, চীনা বাদাম-৬ ও স্থানীয় জাতের বিভিন্ন বাদামের চাষ হচ্ছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় জেলায় বাদাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা ধরনের উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর চরে আগেও বাদাম চাষ হয়েছে, এখনও হচ্ছে। গত বছর থেকে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে বিনা ৬, চীনা বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির বীজ সরবরাহ করেছে। তবে বাদাম বাজারজাতকরণের সমস্যা রয়েছে। এর ফলে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারছেন না। বাদাম জমি থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বাজারজাত করা হলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।’