মালয়েশিয়ার সেপাং শহরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি কুমিল্লায়। ওই দুই শ্রমিকের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌঁছানোর পর রাত দেড়টায় রাজীব মুন্সী ও মহিন উদ্দিনের লাশের কফিন স্বজনরা বুঝে পান।
শুক্রবার দিবাগত রাতেই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামে রাজীব মুন্সীর মরদেহ এবং কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামে মহিন উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার সকালে তাদের মরদেহ নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
রাজীব মুন্সীর মামাতো ভাই জাহিদ হাসান বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিমান থেকে মরদেহ নামানোর পর রাত দেড়টায় আমি রাজীবের মরদেহ বুঝে পাই। মরদেহের সঙ্গে তার মামা এবং বাবা ছিলেন। এরপর মরদেহ তার বাবার বাড়ি দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ১১টায় সেখানে একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজীবকে তার মামার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস গ্রামে দাফন করা হবে। দাউদকান্দিতে জানাজা শেষে মরদেহ মামার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার বাদ আসর বরুড়া খোশবাস কলেজ মাঠে জানাজা শেষে নানা-নানির কবরের পাশে দাফন করা হবে।’
মামাতো ভাই জাহিদ হাসান আরও বলেন, ‘বাবার আদর-ভালোবাসার বঞ্চিত ২৭ বছর বয়সী রাজীব মুন্সী ছিলেন উদার মনের মানুষ। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মা কোহিনুর আক্তার পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি জেলার বরুড়া উপজেলার খোশবাস গ্রামে নিয়ে আসেন। রাজীব মামার বাড়িতেই বড় হয়। রাজীব কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামের মো. ইউনুস মুন্সী রাজীবের বাবা। গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে মায়ের সঙ্গে কথা হয়। এরপর রাত ১টায় খবর আসে মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় রাজীব মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে নেমে আসে শোকের ছায়া। ছেলেকে হারিয়ে তার মা এখন পাগল হয়ে গেছেন। তাকে দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করছে। ’
জাহিদ হাসান বলেন, ‘১০ মাস আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ঋণ করে বহু কষ্টের বিনিময়ে রাজীব মালেশিয়া গিয়েছিল। ফুফুর বিবাহ বিচ্ছেদের পর রাজীব আমাদের বাড়িতে বড় হয়েছে। ফুপু ছেলের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি। রাজীবের বাবা কখনও খোঁজখবর নেয়নি। ২২ বছর ধরে ফুপুর কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ধার-দেনা করে ভাইটিকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছি। তারপর আমি বাড়িতে এসেছি। এই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো জানি না।’
অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরেক প্রবাসী মোহাম্মদ মহিন উদ্দিনের মরদেহ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামে এসে পৌঁছেছে। মহিনের চাচা জামাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিমান থেকে মরদেহ নামানোর পর রাত দেড়টায় তারা লাশের কফিন বুঝে পান। এরপর রাতেই মরদেহ নিয়ে কুমিল্লা রওনা হয়ে সকালে দুর্লভপুর গ্রামে নিয়ে আসেন। শনিবার বাদ জোহর দুর্লভপুর গ্রামের উত্তর বড় বাড়িতে জানাজা শেষে দাদার সঙ্গে দাফন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছর বাহরাইন থেকে চলে আসার পর মহিন উদ্দিন গত সাত মাস আগে মালয়েশিয়ায় যান। ৭ এপ্রিল রাত ১০টায় সময় স্ত্রী, মা-বাবা এবং এক বছরের শিশুর সঙ্গে কথা শেষ করে কাজে রওনা দেয় মহিন। তার বাবা তাজুল ইসলাম কৃষিকাজ করে পরিবার চালান। তারা দুই ভাই দুই বোন। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান মহিন। তার এক বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে মালয়েশিয়ায় যায় মহিন। এরপর ওইদিন রবিবার দিবাগত রাতে খবর আসে মহিন মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তারপর থেকে তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। সকালে ছেলের মরদেহ দেখে মা পাগল হয়ে গিয়েছে। মহিনের লাশ দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করতেছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার সেপাং শহরে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচ বাংলাদেশিসহ ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে দুইজন কুমিল্লার। তারা হলেন– জেলার লালমাই উপজেলার দুর্লভবপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মহিন (৩৭), দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামের মো. ইউনুস মুন্সীর ছেলে মো. রাজীব মুন্সী (২৭)।