উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে সর্বজনীন এ উৎসব। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি।
যশোর
নুসরাত হত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যশোরে বর্ষবরণ করে নেওয়া হলো। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ বরণ উপলক্ষে শহরজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সুরের মূর্চ্ছনায় নতুন বছরের প্রথম সকালে উৎসব সাজে সজ্জিত নারী, শিশুসহ নানা বয়সের মানুষের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে যশোর শহর। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পৌর উদ্যানে উদীচী যশোরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভৈরবী সুরে সেই চিরায়ত, এসো হে বৈশাখ সংগীতে স্বাগত জানানো হয় নববর্ষের প্রথম সকালকে। একইসঙ্গে আশা করা হচ্ছে, নতুন বছরে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। উদীচীর অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল, নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ।
খাড়গাছড়িঐতিহ্যবাহী নৃত্য আর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে খাগড়াছড়িতে উদযাপিত হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়া থেকে সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রাটি একইস্থানে এসে শেষ হয়। পরে মারমা উন্নয়ন সংসদ মাঠে মঙ্গল পানি বর্ষণ, জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি নৃত্য, ছাতা নৃত্য, হাতপাখা নৃত্যসহ বিভিন্ন ডিসপ্লে এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল পানখাইয়াপাড়া মারমা পাড়ায়।
সাংগ্রাই উৎসবের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের সমাগম ঘটে খাগড়াছড়িতে।
আগামী দুইদিন চলবে মারমাদের বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠান সাংগ্রাইং। এছাড়া আজ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসুক উৎসবের দি¦তীয়দিন। এ উপলক্ষে ত্রিপুরাদের পাড়াগুলোতেও চলছে বৈসুক উদযাপনের নানা আয়োজন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, পহেলা বৈশাখ ও বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে বাঙালিসহ সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যেন নিরাপদে তাদের উৎসব পালন করতে পারে সে লক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ চলছে। রবিবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলাঘর আসরের আয়োজনে শিরিষ তলায় নববর্ষের সূর্যকে বরণ করা হয়। এরপর মুড়ির মোয়া, খই, নাড়ু বিতরণ করা হয়। পরিবেশন করা হয় নৃত্য ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গান।
এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহির, জেলা প্রশাসক মাহমুদল কবির মুরাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে কালেক্টরেট ভবন প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় লাঠি খেলা ও পালকি প্রদর্শনের মতো বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শেষে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে পাঁচ দিনব্যাপী লোকজ মেলা ও মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জন পাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন প্রমুখ।
মেহেরপুর
পহেলা বৈশাখে শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চলছে বৈশাখ বরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা প্রশাসন চত্বর থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসন কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার সেখানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় পান্তা উৎসব। এছাড়া, বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব, লাঠি খেলা,হাডুডু,সাপ খেলা, বানর নাচসহ নানা আয়োজন করা হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ নানান সাজে অংশ নেন।
এছাড়া, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, নাট্য সংগঠন ভূমিজ, দিশারী নাট্যগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে পৃথকভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, যাত্রাপালাসহ দিনভর রয়েছে নানান পরিবেশনা।
নাটোর
বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নাটোরে বৈশাখ বরণ করা হয়েছে। রবিবার সকাল আটটায় শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকা থেকে শোভাযাত্রাটি বের করা হয়। প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নাটোরের রাজবাড়ি চত্বরে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এ সময় রাজবাড়ী চত্বরে শুরু হয় চিরাচরিত বাঙালি গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান, উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুর্তাজা আলী বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
জয়পুরহাট
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জয়পুরহাটে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে জেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে সূচনা সংগীত পরিবেশন, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধূলা ও পান্তাভাত খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটির শুরুতেই শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন জয়পুরহাট রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর কালেক্টরেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরে সেখানে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল বারিক, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে বর্ষবরণ সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
শেরপুর
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ এ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেরপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) প্রথম প্রহরে সকাল সাড়ে ৬টায় শেরপুর ডিসি উদ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগাতে সেখানে গাওয়া হয় গান।
সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে শেরপুর জেলা প্রশাসন। ডিসি উদ্যানে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক, জেলা প্রশাসক বেগম আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিমসহ বিভিন্ন দফতরের প্রধান এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিসের মুখোশ পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু-কিশোররা বাদ্য-বাজনাসহ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া জেলা শহর ও প্রতিটি উপজেলাতে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, মাগুরা, নওগাঁ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মানিকগঞ্জসহ সারাদেশে সকাল থেকে নানা আয়োজনে নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে।