১৫ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভাসহ পাঁচ উপজেলা থেকে রোগী আসেন নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে। কিন্তু এ হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় জনবল। এতে এখান থেকে রোগীরা যথাযথ সেবা পান না।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের জায়গায় কর্মরত আছেন ১৩ জন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগে রয়েছেন মাত্র একজন, আর বহির্বিভাগে রয়েছেন ৮ জন। বাকি চার জন চিকিৎসক দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। এতে যথাযথ সেবা পান না রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড রোগীতে ভর্তি। বহির্বিভাগে উপচেপড়া ভিড় টোকেনধারী রোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক সংকটে তারা মানসম্মত সেবা পান না।
তিনি আরও জানান, জরুরি বিভাগে মাত্র একজন মেডিক্যাল কর্মকর্তা থাকায় বেশিরভাগ সময় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংকট থাকায় দাফতরিক কাজসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও তা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এতে রোগীদের বাইরে থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হচ্ছে।
হাসপাতালের রেডিওলোজিস্ট মো. রেজাউল আলম বলেন, ‘বর্তমানে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মেশিনটি মেরামত করালে কিছু দিন চলে আবার নষ্ট হয়ে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পরও কোনও কাজ হয়নি। পাশাপাশি জোড়াতালি দিয়ে চলছে এক্সরে মেশিন। এটিরও বেহাল দশা। পুরোনো এসব মেশিনপত্র দিয়ে পরীক্ষনিরীক্ষা করে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যায় না।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে ওষুধ নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জেলা শহরের শাহীপাড়ার নূর বানু বলেন, ‘ডাক্তার ওয়ার্ডের রোগী দেখা শেষ করে আমাদের দেখতে শুরু করবেন। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কিছুক্ষণ আগে সিরিয়াল পাই। সকালে এসেছি, লাইনে দাঁড়িয়েছি ওষুধ নিতে, এখন বিকাল হয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা দেখার কেউ নেই।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসাদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালে ২২টি পদের বিপরীতে ৯টি পদই শূন্য রয়েছে। আর মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এতো অল্প চিকিৎসক দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক নিয়োগ না দিলে আমাদের কিছুই করা নেই।
হাসপাতালের নাক, গলা, কান বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হাসপাতালে ওষুধের সংকট নেই। তবে চিকিৎসক সংকট প্রকট। তবে চিকিৎসক সংকট বেশিদিন থাকবে না।’
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সদর হাসপাতাল ছাড়াও ছয় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৭০ শতাংশ পদই খালি। প্রয়োজনের তুলনায় কম চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’