ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গসহ ২৬ জেলায় হাজারো যানবাহন চলাচল করে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই সড়কটি। প্রতিবছর ঈদের সময় যানবাহনের চাপে এই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। কয়েক দফায় এ মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের সময় বাড়লেও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হয়নি। কাজ শেষ না হওয়ায় ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা।
কর্তৃপক্ষের দাবি, মহাসড়কের উন্নয়ন কাজে মূল প্রকল্পের সঙ্গে নতুন নতুন প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। ফলে বেড়েছে প্রকল্পের সময়সীমা। দিনরাত চলছে সেই প্রকল্প উন্নয়নের কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে দুই লেনের এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরপর ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালে কাজ শুরু করে। যা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পে বেশ কয়েকটি আন্ডারপাস, ওভারপাস ও দু’টি সার্ভিস লেন যুক্ত হওয়ায় কয়েক দফায় বেড়ে যায় প্রকল্পের সময়। যার নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে মহসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চলছে চার লেনের কাজ। এজন্য সড়কের বেশ কিছু এলাকায় এক পাশ দিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রী সাধারণের।
মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, রাবনা বাইপাস, ঘারিন্দা বাইপাস, ভাতকুড়া বাইপাস এক লেনের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও করটিয়া হাট বাইপাস, জামুর্কি বাসস্ট্যান্ড, ধল্লা বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ড ও গোড়াই এলাকায় মহাসড়কের আন্ডারপাস ও ওভারপাসের কাজ চলমান রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। ফলে গাড়ির বাড়তি চাপ বেড়ে গেলেই যানজটের সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন চালক ও যাত্রী সাধারণ।
প্রতিদিন এই মহাসড়কে গড়ে প্রায় ১০-১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে যানবাহনের সেই সংখ্যা ৫-৬ গুন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে ঢাকা-উত্তরবঙ্গের ১২টি ট্রেন দিনে ২৪ বার ক্রসিং করে। এতে দিনে গড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের ধীরগতির কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রকল্প এলাকায় ১২টি আন্ডারপাস ও দু’টি ওভারপাসসহ বিভিন্ন কাজ চলমান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি খুলে দেওয়া হবে। বাকি এলাকায় দুই পাশ দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ফলে ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘যানজট এড়াতে এবার আমরা ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কে আমরা অধিক বিবেচনায় রেখে সেখানে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন ও টোল আদায়ে গতি বাড়ানোর জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে এবং ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক মহাসড়কে অবস্থান করবে।’