X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইলার ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ

খুলনা প্রতিনিধি
২৫ মে ২০১৯, ১২:০৫আপডেট : ২৫ মে ২০১৯, ১২:২৫

আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ২০০৯ সালের ২৫ মে উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।  খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে ৫৯৭ কিলোমিটার বাঁধ জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। আইলার পর উপকূলের মানুষের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু ১০ বছরেও তা নির্মিত হয়নি।

জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। আইলার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ এখনও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে যে কোনও মুহূর্তে তা ভেঙে আবারও গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। আইলার ৩ বছর পর ভেঙে যাওয়া পাবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত হয়। কিন্তু আইলার ১০ বছর কেটে গেলেও কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি দেওয়া হয়নি। পাউবো কর্তৃপক্ষ মাটি না দেওয়ায় বাঁধগুলোর দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

পাউবো সূত্র অনুযায়ী, আইলার পর ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ-১’ এর আওতায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনায় ৬২৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণে বৃহৎ প্রকল্প নেওয়া হয়। এছাড়া ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়), ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট জেলার ৩৬/১ পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প, ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার দাকোপে ৩১নং পোল্ডার এবং বটিয়াঘাটায় ৩০ ও ৩৪/২ পোল্ডারে বাঁধ পুনঃসংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে অবকাঠামো পুনর্বাসন (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) প্রকল্প, নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প (চতুর্থ পর্যায়), এফডিআর-২০০৭ (ওয়ামিপ) প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পের পরও ৪ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীতে উপকূলের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল বেড়িবাঁধের ভাঙন।

আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল গফ্ফার ঢালি বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনীহা রয়েছে। নামে মাত্র বাঁধ সংস্কার হয়, কিন্তু পূর্ণভাবে কাজটা তারা করে না। যে পয়েন্টে বাঁধ ভাঙে জোড়াতালি দিয়ে সেখানে তা সংস্কার হয়। তখন আবার অন্য অংশে ভাঙে।’

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে আতঙ্ক কাটবে না এ জনপদের মানুষের।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে খাবার পানির জন্য প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, ‘আইলার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বিশেষ বরাদ্দে দিয়ে কয়রাকে আগের মতো ফিরিয়ে আনতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে উপকূলীয় এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে।’

আইলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার বেশি সমস্যা বেড়িবাঁধ সংস্কার, সে ব্যাপারে কাজ চলছে।  ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদ বলেন, এখনও লবণাক্ততা থেকে পূর্ণাঙ্গ রক্ষা পায়নি সমগ্র কয়রা এলাকা। তবে লবণাক্ত জমিতে লবণ সহনশীল ফসল উৎপাদন করতে পারছে স্থানীয় কৃষক।

খুলনার কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম মহসিন রেজা বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মূল ঠিকাদারকে কখনও এলাকায় দেখা যায়নি। তিনি কাজ পাওয়ার পর নির্দিষ্ট কমিশনে কাজটি অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই ঠিকাদার আবার তার কমিশন রেখে কাজটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অন্য ঠিকাদারদের হাতে দেন। এই হাত বদলের পর মাঠ পর্যায়ে ৪০-৪৫ ভাগ বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও লোকজনও জড়িত থাকে।

খুলনা-৬ আসনের এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, উপকূলের ভরাট হতে থাকা নদী ড্রেজিং করে নদীর তীরে ১০-১৫ ফুট চর তৈরি করা গেলে এবং বাঁধের ভেতরে ও বাইরে পরিকল্পিত বনায়ন করা হলে এই বাঁধ ৫০ বছরেও নড়বে না।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে কর্তৃপক্ষ

পাউবোর আমাদী উপ-বিভাগীয় শাখা কর্মকর্তা মশিউল আবেদিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটির কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত অনেক এলাকায় টেন্ডার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। এছাড়া সম্প্রতি যেসব বাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহ বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।

পাউবো, সাতক্ষীরা, ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, ঝুঁকি মোকাবিলায় ১৮-২০ উচু টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাঁধ সংস্কারে ছোটখাট কাজ হলেও এতদিন বড় ধরনের সংস্কার করা হয়নি। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উপকূলে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হবে।

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!