X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
নুসরাত হত্যা মামলা

শিগগিরই ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পিবিআই

ফেনী প্রতিনিধি
২৬ মে ২০১৯, ২৩:৪৫আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ২৩:৪৭

নুসরাত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও মাকসুদ আলমসহ ১৬ জনকে আসামি করে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট প্রস্তুত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রস্তুতকৃত চার্জশিটটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আদালতে জমা দেবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। চার্জশিটে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ্দৌলাকে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া  আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও মাকসুদ আলমকে ঘটনার অর্থায়ন এবং আশ্রয়দাতার কাজ করেছেন বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।

মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিবিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে রবিবার (২৬ মে) কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার তদন্তভার পাওয়ার আগেই সোনাগাজী থানা পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো– মো. আফসার উদ্দিন, মো. কেফায়েত উল্লাহ, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, মো. নূর হোসেন ওরফে হোনা মিয়া, মো. সাইদুল ইসলাম ও উম্মে সুলতানা পপি। তাদের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে কেবল মাদ্রাসা শিক্ষক আফসার উদ্দিন ও মাদ্রাসা ছাত্রী উম্মে সুলতানা পপির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম  বাংলা টিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৪ এপ্রিল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাদ্রাসা শিক্ষক এসএম সিরাজ উদ্দৌলা নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়ার কথা স্বীকার করে। অধ্যক্ষ তার জবানবন্দিতে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন এবং সোনাগাজী পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের কথাও উল্লেখ করেছে।’

তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া ১৬ জনের মধ্যে অধ্যক্ষ ছাড়াও সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই আটজনের জবানবন্দিতে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় উম্মে সুলতানা, কামরুন নাহার, শাহাদাত হোসেন, জাবেদ হোসেন ও সাইফুর রহমান মো. জুবায়েরের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই পাঁচজন মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও মাকসুদ আলম ঘটনার অর্থায়ন এবং আশ্রয়দাতার কাজ করেছেন। গ্রেফতার বাকি আটজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ মামলায় গ্রেফতার ২১ জনের মধ্যে তদন্তে ৫ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের কাজ চলছে।’

পিবিআই প্রধান উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট চলতি মাসেই দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদনে নুসরাতের পোশাকে কেরোসিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা মামলার তদন্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।’

অন্যদিকে নুসরাত হত্যার ঘটনা তদন্তে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফ এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহাম্মদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবেদনে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়।

নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৮ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় মামলা করেন তার ভাই মাহমুদুল হাসান। এরপর  সোনাগাজী থানা ও জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই জানায়, নুসরাত খুনিদের লক্ষ্য হন গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনার পর থেকেই। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল পরিবারটিকে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শরীরের ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন লড়ার পর মারা যান তিনি।  মৃত্যুর আগে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার একটি বর্ণনা দিয়ে যান নুসরাত। আগুন ধরানোর আগমুহূর্তে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলেও নুসরাত উল্লেখ করেছিলেন। 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন