একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফেনীর তোফাজ্জল হোসেন (৬৭) তজুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়েছে। এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন, বরইয়া এলাকার আবু ইউসুফ (৭১) ও উত্তর গোবিন্দপুর এলাকার নূর মোহাম্মদ ওরফে নূর আহমদ (৭৩)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আবদুল হান্নান খান বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তাদের মধ্যে নূর মোহাম্মদকে নীলফামারী থেকে চলতি বছরের ২০ মে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুইজন সাবেক ব্যাংকার তোফাজ্জল ও ইউসুফ পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামি শিল্পপতি তোফাজ্জল হোসেন এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক ও ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক পরিচালক। এছাড়াও তিনি কমপক্ষে ১২টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন।
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো.আবদুল হান্নান খান বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। একাত্তরের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আসামিরা ফেনী সদর থানার ফকিরহাট বাজার এলাকায় হত্যা, লুট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, তোফাজ্জল মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্রসংঘের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জামায়াত কর্মী আবু ইউসুফ এবং নূর মোহাম্মদও মুক্তিযুদ্ধের সময় ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। তারা এখনও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত।
তদন্তে যা পাওয়া গেছে: ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল তোফাজ্জলসহ ৭-৮ জন সশস্ত্র রাজাকার ফেনী সদরের ফকির হাট বাজারে আবুল হোসেনের দোকানে আক্রমণ করে। তোফাজ্জল তার রাইফেল দিয়ে গুলি করে উত্তর ধলিয়ার গোলাম রাব্বানীকে আহত ও আবুল হোসেনকে হত্যা করে। পরে তারা ফকিরহাট বাজারের ১০ থেকে ১৫টি দোকান লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আবুল হোসেনের মরদেহটি তোফাজ্জল আগুনে নিক্ষেপ করে।
এ ছাড়াও একাত্তরের ১০ আগস্ট রাত ১০টার দিকে আবু ইউসুফসহ ৫-৬ জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আবদুর রউফ মেম্বারের বাড়িতে লুটপাট করে। তোফাজ্জল, ইউসুফ, নূর মোহাম্মদসহ অন্য রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক উত্তর গোবিন্দপুরের শামছুল হক, আবদুল হক, মৃত মুজিবুল হক ও আবদুর রউফকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। একই দিন রাত ১টার দিকে এই রাজাকাররা উত্তর গোবিন্দপুরের আবদুল ওহাবকে আটক করে। পরে তোফাজ্জলের নির্দেশে ইউসুফ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাকি সবাইকে কালিদহ বড়দাহ প্রসন্ন রায় জমিদার বাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীই মারা গেছেন। তবে যারা জীবিত আছেন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হচ্ছে, চলতি বছরেই তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।