X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

অগ্রিম টিকিট পেতে ভোগান্তি, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

খুলনা প্রতিনিধি
০৩ জুন ২০১৯, ১২:৪৮আপডেট : ০৩ জুন ২০১৯, ১৩:২৯

খুলনা

ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে খুলনায় গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে আসা চাকরিজীবীদের নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঈদ শেষে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিট পেতে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত বাসের টিকিটের চাপ খুব বেশি। অধিকাংশ বাসের টিকিট এরইমধ্যে বিক্রি শেষ। এ সুযোগে কিছু পরিবহন শ্রমিক যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে খুলনার রেলযাত্রীদের জন্য মোট বরাদ্দ টিকিটের অর্ধেক কাউন্টারে আর অর্ধেক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া কথা। কাউন্টারের অর্ধেক টিকিট বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। মোবাইল অ্যাপে টিকিট কোনও কোনও যাত্রী ভাগ্যক্রমে পাচ্ছেন। আর কেউ কেউ মোটেই পাচ্ছেন না। ফলে অ্যাপের অর্ধেক টিকিটের কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না যাত্রী ও স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২২ মে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে, যা চলে ২৬ মে পর্যন্ত। আর ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয় ২৯ মে থেকে, যা শেষ হয়েছে ২ জুন।

রূপসা থেকে টিকিট কিনতে আসা সামসুল আলম বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপে কোনও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এখানেও একটা মাত্র কাউন্টার থেকে সব টিকিট বিক্রি হচ্ছে।’

নিরালা আবাসিক এলাকা থেকে টিকিট কিনতে আসা মামুন হোসেন বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপের কোনও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আগে সব টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হতো, তারপরও পাওয়া যেত না। এখন তো অর্ধেক টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে, সুতরাং টিকিট পাওয়া দায়।’

মিনা খাতুন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘নারী কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হলে নারীদের টিকিট পাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়।’

খুলনা রেলস্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী লিটন হোসেন বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপের টিকিট দুই-একজন কিনতে পারছেন। কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ টিকিট বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। ঈদ স্পেশাল ট্রেনের সার্কুলার হলেও কাউন্টারে কিছু জানানো হয়নি।’

খুলনা রেলস্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খুলনায় এবার অর্ধেক যাত্রী ঈদের অগ্রিম টিকিট পাচ্ছেন না। কেননা অর্ধেক টিকিট মোবাইল অ্যাপে থাকায় যাত্রীরা তা কিনতে পারছেন না। এই টিকিটগুলো একদিকে যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারছেন না, অন্যদিকে তা কাউন্টার থেকেও বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

নূরনগর এলাকার কলেজছাত্র ইসতিয়াক ৯ জুন এসি বাসের দুটি অগ্রিম টিকিটের জন্য এসেছেন। তার ভাই-ভাবি ঢাকায় থাকেন। তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য আগেভাগেই টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। তিনি এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন, কিন্তু এসি বাসের টিকিট পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘টিকিটের জন্য সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ী ও রয়েলের মোড়ে সব বাস কাউন্টার ঘুরেছি, কিন্তু কোথাও ওই দিনের টিকিট পাইনি।’

ঈগল পরিবহনের শিববাড়ী মোড় কাউন্টারের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম খন্দকার দারা বলেন, ‘এসি বাসের টিকিটের চাহিদা বেশি। ৮-১০ জুন-এ তিনদিন যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় টিকিট শেষ।’

তিনি জানান, অন্য সময় এসি বাসের টিকিটের দাম রাখা হয়েছে ১ হাজার ২শ’ টাকা। এখন অগ্রিম টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৬শ’ টাকা টাকা। চেয়ার কোচের ভাড়া ৫৫০ টাকা হলেও অগ্রিম টিকিটের মূল্য রাখা হচ্ছে ৬২০ টাকা। সরকারি রেট অনুযায়ীই রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই খুলনা থেকে ঢাকাগামী একজন যাত্রীর ভাড়া রাখা হচ্ছে। যেহেতু অন্য সময় যাত্রী কম থাকে, তাই ভাড়াও কম রাখা হয়।

এসি বাস গ্রিন লাইন পরিবহনের শিববাড়ি মোড় কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শেখ জাহিদুর রহমান জানান, ২০ মে থেকে তারা অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন। এরইমধ্যে তাদের টিকিট শেষ। আগামী ৮ ও ৯ জুন ছাড়া বাকি দিনগুলোর টিকিট আছে। তাদের কোম্পানি যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে না।

সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, তারা ২৬ মে থেকে অগ্রিম টিকিট ছেড়েছেন। এরইমধ্যে ৮ ও ৯ জুনের টিকিট বিক্রি শেষ। ১০ জুনের টিকিট বিক্রিও শেষের পথে। তারা চেয়ার কোচের ভাড়া রাখছেন ৬১০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া রাখছেন ১ হাজার ৩শ’ টাকা।

ঈদে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সারা বছর যেসব পরিবহনের বাস তেমন চলে না, ঈদ এলে তারা ভাড়া বাড়িয়ে সুবিধা নেয়।’

হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার আবু সাহান চৌধুরী জানান, ৮ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত টিকিটের চাপ বেশি। তারা ১ জুন থেকে অগ্রিম টিকিট ছেড়েছেন। তবে ঈদের সময় বাস ভাড়া দুই-তিনশ’ টাকা বেশি নেওয়ার কথা তিনি জানান। এর কারণ যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়ার পর খালি বাস নিয়ে ফিরে আসতে হয়। অথচ একটা ট্রিপে তাদের আট থেকে বার হাজার টাকা খরচ হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সম্পাদক অ্যাভোকেট কুদরৎ-ই-খুদা বলেন, ‘যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া বেশি রাখা অনৈতিক কাজ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

 

 

/জেবি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়