গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চাপড়ীগঞ্জে রাজা পেপার মিলের দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি ইছামতি খালে ফেলায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ দূষণ ও কারখানাটি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
রবিবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইছামতি খালের দু’পাড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। এছাড়া, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মহাসড়ক ঘেঁষে কৃষি জমিতে দুই বছর আগে গড়ে ওঠে রাজা পেপার মিল। কারখানার দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে ইছামতি খালে। এতে করে আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারখানা স্থাপনের পর খালের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। কৃষকদের কৃষি জমিতে বর্জ্য প্রবেশ করায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গ্রামের কৃষকরা সেচ সুবিধা, পাট পছানোসহ গরু-ছাগল গোসলেও এই খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। খালের পাশে অবস্থিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও এ পথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পচা ও বিষাক্ত দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। এছাড়া বর্ষা ও বৃষ্টির সময় খালের পানি উপচে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত পানির কারণে চর্মসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া, এলাকার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ওপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বক্তাদের অভিযোগ, খালের পানি দূষণ বন্ধের দাবিতে প্রথম থেকেই এলাকার মানুষ বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন এবং পরিবশে অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনও প্রতিকার মেলেনি। এছাড়া, মিলের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে গত এপ্রিল মাসে বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও নেওয়া হয়নি কোনও পদক্ষেপ। উল্টো স্থানীয়দের হুমকি-ধমকিসহ হয়রানির চেষ্টা করছে কারখানা মালিক ও তার লোকজন। মূলত কারখানা মালিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই প্রতিদিন খালে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রেখেছে। এতে করে জনজীবন ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—প্রভাষক আবদুল জলিল, চাপড়ীগঞ্জ মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সাহিদুল ইসলাম তুষার, চাপড়ীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিবারানী শান্তি, ইউপি সদস্য আবদুল মজিদ, গোলাম রব্বানী, শরিফুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম কুমার, হাসানুল ইসলাম রিপন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম ও চাপড়ীগঞ্জ মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল খোরশেদ আলম প্রমুখ।