ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। আজ রবিবার (১৬ জুন) মধ্যরাতে এ প্রচারণা শেষ হবে। নির্বাচন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি হলেও এখনও চলছে প্রধান দুই প্রার্থীর কথার লড়াই। এই উপজেলায় কে ওড়াবেন বিজয় কেতন তাই নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাব নিকাশ। সরকারদলীয় প্রার্থী ও তার সমর্থকরা শেষ মুহূর্তে ভোটারদের ভয় ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে পারেন এমন আশঙ্কা করছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমান । তবে তাদের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তানবীর ভূইয়া। আগামী ১৮ জুন (মঙ্গলবার) এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দু’জন প্রার্থী।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, সৈয়দ মাঈনুদ্দিন আহমেদ (আনারস), ফজলুল হক সরকার (মোটর সাইকেল) এবং ইঞ্জিনিয়ার মো. মোসাহেদ (দোয়াত কলম)।
চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা রয়েছেন শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায়।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট নেওয়া হবে। তবে ইভিএম ব্যবহারে ধারণা নেই ভোটারদের। ইভিএম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের আশ্বস্ত করছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কেউ কেউ বলছেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হলে সরকারদলীয় প্রার্থী কারচুপি করার সুযোগ পাবেন না। তাই তাদের আশঙ্কা, আ. লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা ‘বিকল্প’ হিসেবে ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসতে পারে সেজন্য বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে পারে।
আজ রবিবার দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল বাজারে কাজল মিয়া ও হাটখোলা বাজারে মনা মিয়ার চায়ের দোকানের আলাপচারিতায় উঠে এলো নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক চিত্র। ওই দুই দোকানে আলোচনায় অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটাররা জানান, সদর উপজেলা পরিষদের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয়নগরেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। তারা বলেন, দলের মনোনীত প্রার্থী জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ কম রেখেছেন। পক্ষান্তরে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমান ব্যক্তিগত অর্থায়নে উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত থাকায় অনেকটাই এগিয়ে। এছাড়া ইভিএম পদ্ধতির ভোটে কোনও ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই বলে সরকারি দল তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে সরকারিদলের পক্ষ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রে ভোটার আসতে না দেওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারাও।
এ নিয়ে কথা হয় সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মো. সুজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। তাই দলের প্রার্থীই আমাদের প্রার্থী।’ যদিও প্রার্থীর কিছু গ্যাপ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাসিম ভূইয়া নামে অপর এক ভোটার বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুটা বিপাকে আছেন। এছাড়া সব দিক থেকেই তিনি ভালো। ‘
নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার জয় নিশ্চিত। বিষয়টা আঁচ করতে পেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তানবীর ভূইয়ার লোকজন বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। তারা আমার ভোটারদের চিহ্নিত করে কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া ও ভয়ভীতি দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।’
এই প্রার্থীর অভিযোগ, ইভিএম যন্ত্রটিও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ফন্দি আঁটছে তানবীর ভূইয়ার লোকজন।
তবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমানের বক্তব্যকে কাল্পনিক বলে আখ্যায়িত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ও ইভিএম যন্ত্র নিয়ে ভয় পাওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ।
তিনি বলেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। বিজয়নগরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করবে। উন্নয়নের কারণে মানুষ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে আমাদের ভয়ের কিছু নেই। এটা ভোটের আধুনিক একটা পদ্ধতি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমানের বক্তব্যকে কাল্পনিক উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভূইয়া বলেন, আগামী ১৮ জুনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা এবং ঐক্যবদ্ধ। ইভিএমে ভোট হবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে কোনেও ধরনের জবরদস্তি করার সুযোগ নেই।
প্রতিপক্ষের প্রার্থীর গাড়িতে অস্ত্র পাওয়া গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার লোকজন বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে এ নিয়ে আমরা মোটেও শঙ্কিত নই। তারা কোনোভাবেই সফল হবে না।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী উল্টো অভিযোগ করেন, কালো টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কালো টাকার প্রভাব ছাড়া তার কোথাও নির্বাচন নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম জানান, অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
আমরা ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মৃণাল চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, লিটন মুন্সি। সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ফয়জুন্নাহার টুনি ও সাবিত্রী রায়।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ৩শ’ ৬৩ জন।