X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডুমুরিয়ায় দ্বিমুখী চাপে নৌকার প্রার্থী

খুলনা প্রতিনিধি
১৭ জুন ২০১৯, ২১:৩১আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ২১:৩২

নৌকা মার্কা স্থগিত হওয়া খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দর সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের কারণে চাপে আছেন নৌকার প্রার্থী মো. মোস্তফা সরোয়ার। অন্যদিকে সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগাতে প্রচারণা জোরদার করেছেন বিপক্ষ দলের প্রার্থী।

জানা যায়, গত ৩১ মার্চ ডুমুরিয়া উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত হয়। পরে ১৮ জুন নির্বাচনের দিন ধার্য হয়।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১৬ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে শনিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৭ প্লাটুন বিজিবি এবং ৪ প্লাটুন র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৯৪টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

নির্বাচনে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন- মোস্তফা সরোয়ার (নৌকা), গাজী এজাজ আহমেদ (ঘোড়া), মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা (আনারস), সেলিম আকতার স্বপন (হাতুড়ী) ও শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দার (দোয়াত কলম)। ৮ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন- আব্দুল লতিফ মোড়ল (বাইসাইকেল), এম এ এরশাদ (টিউবওয়েল), জামিল আক্তার লেলিন (মাইক), শেখ মুজিবুর রহমান (উড়োজাহাজ), গোবিন্দ কুমার ঘোষ (তালা চাবি), সুমন ভ্রম্য (বই) ও গাজী আব্দুল হালিম (টিয়া পাখি) এবং তিন জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- শারমিন পারভীন রুমা (কলস), হাসনা হেনা (ফুটবল) ও মাকসুদা আক্তার রাখি (হাঁস)।

এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গুটুদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার। তবে স্থানীয় খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দের সঙ্গে বিরোধ থাকায় শঙ্কিত তিনি। একদিকে নিজ দলেই বিরোধিতা অন্যদিকে প্রচারণার মাঠে বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় অবস্থানের কারণে দ্বিমুখী চাপে রয়েছেন তিনি।

মোস্তফা সরোয়ার দাবি করেন, ‘এখানে আমি বিরোধী দলের প্রার্থীর চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। কারণ এখানকার সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দর অনুসারীরা আমার বিপক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় বলছেন এ নৌকা সে নৌকা না। নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সেন্টারে যাবা না। নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন তারা।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘সংসদ সদস্য কখনো শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দারকে সমর্থন দেন। আবার তার পক্ষে ভোটার সমর্থন না থাকায় বিএনপির প্রার্থীকে উস্কে দেন। তার কারণেই বিএনপি প্রার্থী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদির ছেলে গাজী এজাজ আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচিত হলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যেসব দুর্নীতি আছে, তা প্রতিরোধ করা হবে।

একইসঙ্গে এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আরেক নেতা শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দার। তবে কৌশলগত কারণে গাজী এজাজ আহমেদ প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন বলে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা জানিয়েছেন।

খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘মোস্তফা সরোয়ার নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন। তিনি ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভেঙেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে ডুমুরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দারকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় তিনি নৌকা প্রতীক পাননি।’

নারায়ন চন্দ্র চন্দ দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী গাজী এজাজ আহমেদ ও শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সে কারণে শাহনেওয়াজ প্রচারণার মাঠে নেই। এজাজ আহমেদের বাবা গাজী আব্দুল হাদি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮ জুন সাধারণ ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রকৃত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’

অন্যদিকে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগটা কাজে লাগাতে চান তিনি। দলীয়ভাবে তাকে বহিষ্কার করা হলেও বর্তমানে তার পক্ষে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী মাঠে রয়েছেন।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার অপেক্ষায় রয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মানুষ।

উল্লেখ্য, ৩১ মার্চ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যে ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জেরে রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৭ মার্চ এই আদেশ দেন। এরআগে, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে মোস্তফা সরোয়ার এবং শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়ার্দারকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর শাহনেওয়াজকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু রিটার্নিং অফিস থেকে মোস্তফা সরোয়ারকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর রিটার্নিং অফিসের প্রতীক বরাদ্দের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ৭ মার্চ আপিল আবেদন জানানো হয়। সে আপিল আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান থাকায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন প্রার্থী শাহনেওয়াজ। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নির্বাচন স্থগিত করাসহ রুল জারি করেন।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা