X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলে থাকেন অট্টালিকায়, মা ভাড়া ঘরে

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
২৩ জুন ২০১৯, ১৩:১৫আপডেট : ২৩ জুন ২০১৯, ১৫:৩১

ছেলের তিনতলা বাড়ি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছেলে কিরণ শিকদার থাকেন নিজের তিনতলা বাড়িতে। এত বড় বাড়ির এককোণেও ঠাঁই হয়নি ৯৫ বছর বয়সী মা মরিয়ম বেগমের। তাকে রেখেছেন ভাড়া করা টিনের ঘরে। শুধু মাস খরচের বাজার সদাই দিয়েই ছেলে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ছেলে না দেখলেও মরিয়ম বেগমকে দেখভাল করছেন প্রতিবেশীরা।

মরিয়ম বেগম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকার মৃত মজনু মিয়ার স্ত্রী। ২০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে কিরণ ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ও ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

স্থানীয়রা জানান, রমজান মাসে বৃদ্ধ মাকে নতুন বাজার এলাকার গফুর মিয়ার একটি ভাঙা টিনের ঘর ভাড়া করে সেখানে রেখে যান কিরণ। ঘরে একটি পুরনো তোষক আর দু-চারটি থালা বাসন ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্ধকার ঘরেই একা একা দিন পার করছেন এই বৃদ্ধা মা। মাঝে মধ্যে কিছু বাজার সদাই করে দেয় ছেলে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মরিয়ম বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে কোনও রকমে হাঁটতে পারেন।

মরিয়ম বেগম বলেন, ‘এখানে আসার আগে গ্রামের বাড়িতেও একা ছিলাম। ছেলে যখন বললো আমাকে তার কাছে নিয়ে আসবে, ভাবছিলাম তার বাড়িতে তুলবে। পরে দেখি ঘর ভাড়া করে দিয়েছে। ছেলের বউ আমাকে তাদের সঙ্গে রাখতে চায় না। আমাকে সঙ্গে রাখার কথা শুনলে বউ ছেলের সঙ্গে ঝগড়া করে। তাই ছেলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। ছেলে মাঝে মধ্যে এসে বাজার সদাই করে দিয়ে যায়।  ইচ্ছে ছিল জীবনের শেষ সময়ে ছেলে, নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে দিন কাটাবো। কিন্তু আমার কপালে সেই সুখ নাই।’

ভাড়া বাড়িতে থাকেন মা তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে খোঁজখবর নিলেও ছেলের বউ, নাতি-নাতনিরা কেউ আসে না। কোনও খোঁজখবরও নেয় না। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর সেও তেমন খোঁজখবর রাখতে পারে না। আমি এখন সন্তানদের বোঝা হয়ে গেছি। একা লাগলে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করি।’

অসহায় এই মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। চিকিৎসা না করায় প্রায় ১০ বছর আগে বাম পাশের চোখটি নষ্ট হয়ে যায়।  এখন ডান পাশের চোখটিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। হয়তো এটিও নষ্ট হয়ে যাবে।’

প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া দিনা বেগম বলেন, ‘বৃদ্ধা মাকে থাকার জন্য ছোট একটি চৌকি দেওয়া হয়েছিল। সেটিও ছারপোকায় খাওয়া। তাই মাটিতে বিছানা করে ঘুমান তিনি। বৃদ্ধা মাকে এভাবে একা অন্ধকার ঘরে রাখা খুবই অমানবিক। শুনেছি ছেলের বউ নাকি মাকে তাদের কাছে রাখতে চায় না। তার রান্নাবান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়া এসব আমরাই করে দেই।’

এ ব্যাপারে কিরণ শিকদার বলেন, ‘ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে মাকে আমার দোকানের পাশে একটি ঘর ভাড়া করে সেখানে রেখেছি। যে মায়ের জন্য আমি পৃথিবীর আলো দেখেছি, সেই মায়ের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। যেখানে রেখেছি খাবার-দাবারসহ সব দেখাশোনা আমি নিজেই করছি। কিছুদিনের মধ্যে আমার বোন চলে আসবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।’ 

 

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ