X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ধীরগতি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৭ জুলাই ২০১৯, ০৮:০৩আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৯, ১৬:৩৩

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ধীরগতি তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষ হওয়ার বাকি আর মাত্র ১১ মাস। এতদিনে প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই করতে পারেননি অনেক ঠিকাদার! চট্টগ্রাম নগরীর ‘জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ মেগাপ্রকল্পের এই চিত্র। ১৫টির অধিক প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের কাজ পেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পেরেছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। অন্যরাও এখনও কাজ শুরুই করতেই পারেনি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে দেরি এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরে সময়ক্ষেপণের কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এন্ডভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) অসযোগিতার কারণেও বেশিরভাগ ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছে না। তবে সিডিএ’র দাবি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিলে বিস্তারিত নকশা বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপরই তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নকশা বুঝিয়ে দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তদারকি করছে জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫টির অধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্পেক্ট্রা, এনডিই ও বিশ্বাস ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া আমেনা গ্রুপ, বিবিএল-বিটিসি-এমএলবি জয়েন ভেঞ্চার ও ই ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এক বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো প্রকল্পের ৫ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি। প্রকল্প শুরুর ১৫ মাস পার হলেও এখনও খালগুলোর পুনঃখনন কাজও পুরোপুরি শুরু হয়নি। খালের পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও রাস্তা নির্মাণসহ অন্যান্য কাজও চলছে ধীরগতিতে।
বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডিং অ্যান্ড কানস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নগরের ১০টি খালের উন্নয়নের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। খালগুলো হলো- রাজাখালী-১, রাজাখালী-২, সদরঘাট-১, সদরঘাট-২, চাক্তাই ডাইভারশন, বাকলিয়া, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গীবাজার ও মোগলটুলী খাল। কার্যাদেশের মেয়াদ এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কোনও খালের কাজই এখনও শেষ করতে পারেনি। দুটি খালের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। একই অবস্থা এনডিই লিমিটেডের। এই প্রতিষ্ঠান ছয়টি খালের কাজ পেয়েছে। তিনটি খালে কাজ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত বাকি তিনটির কাজ শুরুই করতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রকল্পের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সময় মতো ডিজাইন না বুঝিয়ে দেওয়ার কারণেই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই এই প্রকল্প শেষ করা সম্ভব নয়।’
এই প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে ৩১টি খালের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন করতে এক বছর সময় লেগেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এপ্রিল মাসে বিস্তারিত নকশা বুঝিয়ে দেয়। এরপর আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝিয়ে দিয়েছি। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তদারকি করছে। ঠিকাদাররা কেন কাজ শুরু করতে পারছেন না। সেটি তারা বলতে পারবেন।’
এই প্রসঙ্গে জানতে মেগা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল শাহ আলীর মোবাইলফোনে ২২ জুলাই কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা হবে। এছাড়া নগরের কোন খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কতটুকু হবে, কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা প্রয়োজন ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের জন্য নকশা প্রণয়ন করতে পরার্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এন্ডভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের আবাসিক প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি প্রকল্প যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করা হয়, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। প্রকল্পের ডিজাইন শেষ করার আগেই ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ঠিকাদার নামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ঠিকাদারের কাছে রেট নেই, ডিজাইন নেই। কীভাবে কাজটা সম্পাদন করবে, তার কোনও আউট লাইন নেই। তড়িঘড়ি করে তাদেরকে কাজ করার জন্য মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই ঠিকাদাররা এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।’
প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন আরও বলেন, ‘যাই হোক ইতোমধ্যে ডিজাইন দেওয়া হয়ে গেছে। শুরুতে যে ডিজাইনটা তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে আমরা মাঠে নিরীক্ষা চালিয়ে দেখলাম, ওই রিপোর্টগুলো বাস্তবসম্মত নয়। কারণ চট্টগ্রাম নগরীর মাটি খুব ভালো নয়। আমরা যখন সয়েল টেস্ট করে আবার ডিজাইন তৈরি করলাম। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি ঠিকাদারদের সঙ্গে যে রেটে কথা হয়েছে, তার সঙ্গে যাচ্ছে না। তারা যে সম্ভাব্য খরচ ধরে কাজটা নিয়েছিল, সেটিও হচ্ছে না।’
প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন বলেন, ‘রাজাখালী খালের কল্পলোক অংশে আমরা পাইলিং ছাড়াই রিটেইনিং ওয়াল তুলতে পেরেছি। কিন্তু, অন্যান্য খালে এটি করা যাচ্ছে না। খালগুলোর মাটি এত নরম, সেখানে পাইলিং করে তারপর রিটেইনিং ওয়াল তুলতে হবে। এরকম অনেক জায়গায় ডিজাইন পরিবর্তন করতে হচ্ছে।’

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ